Ajker Patrika

রোগী থাকতে চান না ফাঁকা হাসপাতাল

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৭
রোগী থাকতে চান না ফাঁকা হাসপাতাল

কৃষক শফিকুল ইসলামের (৪০) যক্ষ্মা ধরা পড়েছে চার দিন আগে। তাঁকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। এখানে তিনি ভর্তি হয়েছেন, তবে সঙ্গে কেউ নেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যক্ষ্মা সারতে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়টা তাঁকে হাসপাতালেই থাকতে হবে। কিন্তু থাকবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধা কাজ করছে তাঁর মনে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপাবাড়ি গ্রামের শফিকুল গতকাল বুধবার বলেন, বাড়িতে স্ত্রী আর ছোট সন্তান আছে। তিনি একাই হাসপাতালে আছেন। কত দিন থাকতে পারবেন জানেন না। হয়তো দ্রুতই চলে যাবেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় লম্বা সময় ভর্তি থাকতে হয়। তাই রোগীরা থাকতে চান না। ফলে বছরজুড়েই হাসপাতালের বেশির ভাগ শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকে। জোর করে কোনো রোগীকে আটকে রাখা যায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে যান। কেউ কেউ লাপাত্তা হন না জানিয়েই।

গতকাল সকালে ব্যাগপত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছিলেন সিরাজগঞ্জের জামিরা গ্রামের সাধনা বেগম। যক্ষ্মা আক্রান্ত মধ্যবয়সী এই নারী ভর্তি ছিলেন ২১ দিন ধরে। অসুখ এখনো সারেনি। তবে গতকাল জানালেন, বাড়িতে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাবেন।

রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রাজশাহী ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের রোগীরা চিকিৎসা নেন। যক্ষ্মা চিকিৎসায় বিশেষায়িত এই হাসপাতাল ১৫০ শয্যার। তবে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী থাকেন এখানে। বাকি শয্যাগুলো পড়ে থাকে ফাঁকা। অথচ এখানে চিকিৎসার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আছে জিন-এক্সপার্ট মেশিন, ডিজিটাল এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন। প্যাথলজির সব পরীক্ষার ব্যবস্থাও আছে। বিনা মূল্যেই এসব পরীক্ষা করা হয় রোগীদের।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর এখানকার প্যাথলজিতে ৬ হাজার ২৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫২১ জনের এমটিবি (সাধারণ যক্ষ্মা) শনাক্ত হয়। এ ছাড়া ৩০ জনের আরআর টিবি শনাক্ত হয়। আরআর টিবি রোগীদের শরীরে আর অ্যান্টিবডি কাজ করে না। বেশির ভাগ রোগীই বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসে পরীক্ষা করিয়েছেন। ভর্তি থাকা রোগীর পরীক্ষা কম।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০২০ সালে ২৪ হাজার ৭৫৭, ২০২১ সালে ১৮ হাজার ৭৬৫ এবং চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৩ হাজার ৯১৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। অথচ ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। ২০২০ সালে এখানে ৬৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১১ জন। ২০২১ সালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৭৪ জন। ওই বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৯৮ জন। আর মারা গেছেন ২৮ জন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে মারা গেছেন ছয়জন। ভর্তি হয়েছেন ১৪১ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১১২ জন। বুধবার হাসপাতালটিতে ৬৫ নারী-পুরুষ রোগী ভর্তি ছিলেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঠুটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক (৭৫) হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক মাস ধরে। নুরুল জানান, ছয় মাস তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ খেয়েছেন। পরের ছয় মাস পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাও যক্ষ্মা ভালো হয়নি বলে রাজশাহী এসেছেন। নুরুলের সঙ্গে থাকছেন তাঁর ছেলে মাসুদুর রহমান। যত দিন যক্ষ্মা ভালো না হচ্ছে, তত দিন তাঁরা বাবা-ছেলে বাড়ি ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।

তবে দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসার জন্য অনেকেই ভর্তি থাকেন না। বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, যক্ষ্মা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। দুই থেকে চার মাস এমনকি ছয় মাস পর্যন্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। কিন্তু আত্মীয়স্বজনের পক্ষে দূর থেকে এসে হাসপাতালে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক রোগীই ভর্তি থাকতে চান না। কেউ কেউ পালিয়ে যান ছাড়পত্র না নিয়েই। ঠিকানা অনুযায়ী যোগাযোগ করে তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।

মজিবুর রহমান জানান, হাসপাতালে যে সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়, তার চেয়েও বেশি রোগী গ্রামগঞ্জে লুকায়িত অবস্থায় আছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁদের চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থাও কাজ করছে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধ আছে। উপজেলা পর্যায়েও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। এখন আর মাইক্রোস্কোপ দিয়ে যক্ষ্মার জীবাণু পরীক্ষা করতে হচ্ছে না। জিন-এক্সপার্ট মেশিনে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রাম থেকে লুকায়িত রোগী খুঁজে এনে ভর্তি করানোটাই একটা চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে এই কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত