Ajker Patrika

রোদের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ধান

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
Thumbnail image

সুনামগঞ্জে চলতি বছর বন্যায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি নামার পরেও ডুবে যাওয়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। তবে এক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণের কারণে ধান শুকাতে পারছেন না তাঁরা। ঘরে ধান স্তূপ করে রাখায় পচে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।

বৃষ্টির মধ্যে ঘরে তোলা ভেজা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার কৃষকেরা। ফলে ধান শুকাতে না পেরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাঁরা। তিন উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে ভেজা ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা। এক সপ্তাহ ধরে দিনের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ধান নিয়ে।

কৃষকেরা জানান, চলতি বছর একের পর দুর্যোগের মধ্য দিয়ে বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারলেও সম্প্রতি বন্যায় হাওরের অবশিষ্ট ধান পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারেননি তাঁরা।

গৌরারাং ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা কপালো এইবার ধান নাই। একটার পর একটা বিপদ আছেই। বন্যার পানি নামছে। মনে করছিলাম ধান কাইটা তুলতাম পারমু, কিন্তু ধান কাইটা এখন বৃষ্টির লাগি মাড়াই করতাম পারতাছি না।’

এদিকে ধান শুকানোর মাঠে পানি। খেত থেকে ধান কেটে নিয়ে আসতে পারলেও অনেকেই শুকাতে না পেরে বাড়িতে স্তূপ করে রেখেছেন। বৃষ্টির কারণে মাড়াইও করতে পারছেন না। আবার অনেকে ধান মাড়াই করতে পারলেও শুকাতে পারছেন না। উঠান-ঘরে ধান পচে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।

অনেকেই বাধ্য হয়ে ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যানের বাতাসে ধান শুকাচ্ছেন। অপর দিকে যেসব জমির ধান এখনো কাটা হয়নি, সেসব খেতের ধান পানির নিচ থেকে কেটে আনার চেষ্টা করছেন কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জ সসর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বন্যায় ধান তলাইছে কিছু। পানি নামার পরে ধান কাটছি। কিন্তু এখন বৃষ্টিই ছাড়ছে না। কষ্ট কইরা পানির তল থাইকা ধান কাইট্টাও কোনো লাভ হইল না।’

অন্যদিকে ধান কেটে মাড়াই করার পর ধান শুকাতে না পারায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। জগাইরগাঁও গ্রামের কৃষক সামছুল ইসলাম বলেন, ‘ধান কাইটা আর ওইতো কিতা। রইদ নাই ধান শুকাইতাম পারতাছি না।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানা গেছে, ১৩ জুন পর্যন্ত ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি সিলেট বিভাগে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। ফলে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল আসার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সুরমা নদীর পানি বাড়বে। বৃষ্টিপাত আরও সপ্তাহ খানেক অব্যাহত থাকতে পারে।

বৃষ্টিতে কৃষকেরা ধান শুকাতে পারছেন না—এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘আমরা ধান শুকানো জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের দিচ্ছি। ধান কেটে ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে রাখার জন্য পরামর্শও দিচ্ছি। এভাবে রাখলে ধান কম নষ্ট হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত