Ajker Patrika

ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে হিন্দুপল্লিতে ভাঙচুর, ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশও

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ২৩: ২৯
বাড়িতে হামলা হওয়ার পর এক নারীর আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়িতে হামলা হওয়ার পর এক নারীর আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে তাঁকে আটকের পর আজ রোববার গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এদিকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে এক দফায় ওই যুবকের বাড়ি মনে করে অন্য একজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। আরেক দফায় হিন্দুপল্লিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে ১২টির মতো পরিবারের ঘরবাড়ি তছনছ করা হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কে ৫০টির মতো পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বাড়িতে হামলা হওয়ার পর এক নারীর আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়িতে হামলা হওয়ার পর এক নারীর আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওই গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ এক যুবককে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর পাশের এলাকার একদল লোক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় গ্রামের লোকজন ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ওই যুবকের বাড়ি মনে করে বিক্ষুব্ধ লোকজন অন্য একজনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরে আজ বেলা ৩টার দিকে ওই হিন্দুপল্লির পাশের এলাকার লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিঙ্গেরগাড়ি বাজারে এসে জমায়েত হন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে খিললগঞ্জ বাজার হয়ে বিকেল ৪টার দিকে আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে এসে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙচুর করা একটি বাড়ির ভেতরে মাটিতে লুটিয়ে বিলাপ করছেন এক নারী। এ সময় তিনি বলেন, ‘ওরে বাবারে হামাকগুলাক নিঃস্ব করি দিলে। হামরা এখন কেমন করে চলমো। হামাক যে নিঃস্ব করি দিয়ে গেল। হামার যে সব লুটপাট করি নিয়া গেল।’

এক তরুণী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৫০০ থেকে ৬০০ লোক হাতে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালান। এ সময় পুলিশের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা চালান মিছিলে অংশ নেওয়া লোকজন। পরে পুলিশ সরে গেলে প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে ঢুকে তাঁরা লুটপাট ও ভাঙচুর চালান। এ সময় গ্রামের সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই তরুণী বলেন, ‘আমার কথা, আমরা চাই, যে দোষ করেছে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমাদের নির্দোষ মানুষদের ঘরবাড়ি কেন ভাঙা হলো, লুটপাট কেন করা হলো?’

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পরে গ্রামটিতে অবস্থান নিই। প্রথমে তারা বলছিল, তারা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও মিছিল করে চলে যাবে। কিন্তু তারা হুট করে এসে হামলা চালায়। এতে আমাদের একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত