Ajker Patrika

৬ বছর ধরে ভুগছেন তাঁরা

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২২
৬ বছর ধরে ভুগছেন তাঁরা

বাড়িগুলোর আঙিনায় মলমূত্র আর ময়লা পানির দুর্গন্ধ। এসব থেকে রক্ষা পেতে বেশির ভাগ বাড়ির সামনেই করা হয়েছে উঁচু দেয়াল। যাঁরা দেয়াল দেননি, তাঁদের ঘরের মেঝে অস্বাভাবিকভাবে উঁচু। ঘরের ভেতর দাঁড়ালে টিনের চালা মাথায় লেগে যাওয়ার উপক্রম। তা ছাড়া এডিস মশার উপদ্রব তো আছেই। ছয় বছর ধরে এমন পরিবেশে ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করছেন উত্তরখানের হিন্দুপল্লির বাসিন্দারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উত্তরখানের চানপাড়ায় পলমল গ্রুপের কে এম অ্যাপারেল নিট (প্রা.) লি. গার্মেন্টসের কারণেই তাঁদের এমন করুণ দশা হয়েছে। গার্মেন্টসটির কোনো পয়োনিষ্কাশন লাইন না থাকায় শ্রমিকদের মলমূত্রের পানি, কাপড় ধোয়ার পানিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি গার্মেন্টসের দেয়ালের চারপাশ দিয়ে সোজা হিন্দুপল্লিতে গিয়ে পড়ে। যে কারণে ছয় বছর ধরে বারো মাসই পানিতে তলিয়ে থাকে ওই পল্লি। এর মধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর, থানার পুলিশ, গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও দুরবস্থা থেকে মুক্তি মেলেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

হিন্দুপল্লির মুদি দোকানদার নিবাস সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পলমল গ্রুপের গার্মেন্টস হওয়ার পর থেকে আমাগো সমস্যার শেষ নাই। পাঁচ-ছয় বছর গার্মেন্টসের ময়লা-আবর্জনার কারণে রোগবালাই লেগেই আছে। সমস্যার বিষয়ে সব জায়গায় জানিয়েছি। কিন্তু কেউই এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, আমরা তাইলে যাব কই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়লা পানির পাশাপাশি বেহাল সড়কের ভোগান্তিতেও পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

গার্মেন্টস থেকে ওই পল্লি পর্যন্ত রাস্তার বেশির ভাগই ভাঙাচোরা। এতে হিন্দুপল্লির অন্তত ৬০টি পরিবারকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া পল্লির ভেতরে যাওয়ার সড়কটি ময়লা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্দিদশা থেকে বাঁচতে রাস্তার ওপর ইটের খোয়া ও কংক্রিট ফেলে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গার্মেন্টসের দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে রণজিৎ শীলের বাড়ি। সেখানে দেখা যায়, গার্মেন্টসের ময়লা এসে বাড়ির ছাদ ও ঘরের ভেতরে ঢুকছে। রণজিৎ শীলের স্ত্রী সান্ত্বনা রানী শীল বলেন, ‘ঘরের মেঝে উঁচু করেছি। তারপরও পানি ঢুকছে। তা ছাড়া গার্মেন্টসের ময়লা এসে পুরো ঘর নোংরা করে দেয়।’ হিন্দুপল্লির বাসিন্দা মাজেদা বেগম বলেন, ‘ময়লা তো আসেই। তা ছাড়া তীব্র শব্দের কারণে ঘুমাতে পারি না। রাস্তায় সারা বছরই হাঁটুপানি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৬ জুলাই দুর্ভোগের প্রতিকার চেয়ে গার্মেন্টসটির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর দরখাস্ত করে ওই পল্লিতে বসবাসরত ভুক্তভোগীদের মধ্যে ২১ পরিবার। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম মোল্লার কাছেও সমস্যার প্রতিকার চেয়ে আবেদনপত্র জমা দেন ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৯ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম গার্মেন্টস থেকে টাকা খান। যার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেন না। অন্যদিকে পুলিশও অভিযোগ পেয়ে গার্মেন্টসে ঢোকে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে কী করে যেন চুপ হয়ে যায়! তা জানি না আমরা।’ উত্তরখান থানার ওসি আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর আমরা পল্লির সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগই পাইনি। যদি পাই তবে সমাধানের চেষ্টা করব।’

নানা অভিযোগ নিয়ে কে এম অ্যাপারেল নিট (প্রা.) লি. গার্মেন্টসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে গার্মেন্টসের নিরাপত্তা ইনচার্জ মোশারফ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই। আপনি জিএম বা এজিএমের সঙ্গে কথা বলেন।’ কিন্তু সাংবাদিক পরিচয়ে সশরীরে গার্মেন্টসে গেলেও নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে ঢুকতে দেননি। তা ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলতে ডিএনসিসির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম মোল্লা তাঁর অফিসে যেতে বললেও সেখানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ আলহাজ হাবিব হাসান বলেন, ‘বাসিন্দারা একবার আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু তখন বিষয়টি দেখতে পারিনি। সমস্যাগুলো জেনে তারপর মন্তব্য করা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত