Ajker Patrika

মিরাজের আত্মহত্যা

সম্পাদকীয়
মিরাজের আত্মহত্যা

ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মিরাজ হোসেন। মাত্র ২৩ বছর বয়স তাঁর। আজকের পত্রিকার খুলনা সংস্করণে প্রকাশিত খবরটি পড়ে মনে হলো,আমাদের চিন্তা-পদ্ধতির মধ্যে কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। মানুষ খুব দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে। ভাবনার জন্য সময় রাখছে না।

ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রায় সবার হাতে মোক্ষম অস্ত্র এসে গেছে। এ রকম ভয়ংকর অস্ত্রের তুলনা হয় না। আবার চাইলেই সেই অস্ত্রকে পরিণত করা যায় ফুলে। কিন্তু কে আর সে কষ্ট করবে? নিজেদের মান-অভিমান প্রকাশের জন্য কম্পিউটার ও মোবাইল নামের অস্ত্র হয়ে উঠেছে সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হলো, অর্থকষ্টে কাটছিল মিরাজের জীবন। ছিল দাঁতের অসুখ। সেটা সহ্যসীমা অতিক্রম করতেই তিনি অভিমানী স্ট্যাটাস লিখে আত্মঘাতী হয়েছেন।

বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জগৎ অনেক বেশি আপন হয়ে উঠছে এ কালের মানুষের কাছে। সেখানেই সে খুঁজছে আশ্রয়। মানসিক রোগীদের নিয়ে যাঁদের কারবার, তাঁরা প্রায়ই বলেন, শরীরের রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের দিকে নজর না দিলে বিপদ বাড়বে। একেবারে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে যাঁকে, সেই মানুষটিই যে মানসিকভাবে হতাশার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছেন, সেটা দুর্ঘটনা ঘটার আগে কেউ টেরও পায় না। এই ডিপ্রেশন তো মানসিক সংকট। সেই মানুষটাকে রোগী হিসেবেই দেখতে হবে। কিন্তু আমরা বিষণ্ন মানুষকে বোঝার চেষ্টা করি না। তিনি যে অসুস্থ, সেটাও বুঝতে পারি না।

মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতাই এ জন্য দায়ী। এখন তো এমনও দেখা যায়, পাশাপাশি বসে আছেন চারজন মানুষ। প্রত্যেকের নজর শুধুই নিজ নিজ মোবাইল ফোনের দিকে। পরস্পর কোনো কথাই হচ্ছে না।

মিরাজের মনে কী নিয়ে কতটা তোলপাড় ছিল, সে কথা তো এখন আর খুঁজে বের করা যাবে না। তবে এটা নিশ্চয়ই বলা যাবে, বিষ খাওয়ার সিদ্ধান্ত একদিনে তিনি নেননি। দীর্ঘদিন তিনি নিজেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। একসময় তাঁর মনে হয়েছে, যে সমাজে তিনি বাস করেন, সেই সমাজে টাকাই সব। টাকা না থাকলে বন্ধু থাকে না, পরিবারের মানুষজনও কপর্দকহীন মানুষকে মূল্য দেয় না। যখন তিনি ভেবে কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি এবং দাঁতের অসুখে জেরবার হয়েছেন, তখন আর কোনো কিছু বিবেচনায় না নিয়ে তিনি জীবন থেকে বিদায় নিলেন।

এ সময়টিতে মানুষের ধৈর্য গেছে কমে। অন্যের কথা শোনার আগ্রহ গেছে কমে। অন্যকে বোঝার ইচ্ছে গেছে কমে। নিজের কোটরে ঢুকে পড়ছে মানুষ। সেখান থেকে মানুষকে বের করতে হলে জীবনাচরণ পদ্ধতিতেই আনতে হবে পরিবর্তন। এখন তো দেখাই যাচ্ছে, কত তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা করছে মানুষ!

মিরাজ ফিরবেন না। কিন্তু আরও অনেক মিরাজের জন্ম হচ্ছে, যাঁরা না-ফেরার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তাঁদের বাঁচানোর পথ খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত