Ajker Patrika

সংসারের ব্যয় বাড়াচ্ছে ধার কষ্টে আছেন রফিজেরা

মো. জাকিরুল ইসলাম, হালুয়াঘাট
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫২
সংসারের ব্যয় বাড়াচ্ছে ধার কষ্টে আছেন রফিজেরা

পাঁচজন সদস্য নিয়ে সংসার হালুয়াঘাট উপজেলার কড়ইতলী স্থলবন্দরের শ্রমিক রফিজ উদ্দিনের। তিনি বন্দরে লোড-আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ভরা মৌসুমে পণ্য ওঠানো-নামানো করে মজুরি তুলতেন ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এতে কোনো রকমে তাঁর সংসার চলত। তবে বর্তমানে বন্দরে কয়লা আমদানি না থাকায় মজুরি পান ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। এরই মধ্যে রমজান মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ রফিজের পাঁচজনের সংসারে সবাই আছেন কষ্টে।

রফিজের বাড়ি উপজেলার কড়ইতলী এলাকায়। নিত্যপণের বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে শুধু রফিজ একা নয়, তাঁর মতো কষ্টে আছেন উপজেলার কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের প্রায় ছয় হাজার শ্রমিকের পরিবার। রফিজ বলেন, ‘পাঁচজনের সংসারে মাসে চাল লাগে দেড় মণ। বাড়ির পাশে কিছু কৃষিজমিতে ধান আবাদ করি। তাতে চলে যায়। কিন্তু সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার বাজার করতে হয়। মাসে প্রায় ৪০০ টাকার ডাল, ৭০০ টাকারও বেশি তেল, আলু-মরিচ, রসুন, পেঁয়াজসহ আনুষঙ্গিক অনেক কিছু কিনতে বেশি কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া মাছ-মাংস, ছেলের পড়াশোনার খরচ তো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে মাস শেষে ধারদেনা করে চলতে হয়।

শ্রমিকেরা বলছেন, আগের মতো কাজ নেই। কাজ বেশি থাকলে আয় বেশি হয়। দুই মাস ধরে কাজ কমে যাওয়ায় এবং রমজান মাসে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। মাস শেষে সবাইকে ধারদেনা করে চলতে হয়। সরকার শ্রমিকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করলে তাঁদের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার মুনসুর আলীও পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করেন গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে। তিনি জানান, কাজ না থাকায় ধারদেনা করে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে শসার আবাদ করেছেন। শসার ফলন ভালো হলে কিছুটা সুবিধা হবে মুনসুর আলীর। তিনি বলেন, ‘কাম-কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক পেশা বদল করে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। কেউ কেউ শসা আবাদ করছেন। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকেরা বিপাকে পড়ে গেছেন।’

এ ব্যাপারে হালুয়াঘাটের কড়ইতলী স্থলবন্দর শ্রমিক সংঘের সভাপতি মো. রমজান আলী বলেন, ‘দুই মাস ধরে স্থলবন্দরে আমদানি নেই বললেই চলে। একদিকে আমদানি না থাকায় কাজ কম। অন্যদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। সংসার চালানো এখন অনেক কষ্টের। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোরালো দাবি, শ্রমিকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হোক।’

শ্রমিকদের আলাদা সহযোগিতা করার বিষয়ে ভুবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম সুরুজ মিয়া বলেন, ‘স্থলবন্দরে তেমন কাজ না থাকায় শ্রমিকেরা বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সবজি চাষে বেশি ঝুঁকছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ন্যায্যমূল্যের কার্ড অনেক শ্রমিককে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামনে অনেক শ্রমিককে ভিজিডির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।’

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে অসহায়দের সহযোগিতার আওতায় আনা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত