সেতুর সুবিধা আটকে জটে

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ১২: ২৮
Thumbnail image

উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতুতে শুরু হয়েছে যান চলাচল। ইতিহাসের সাক্ষী হতে সেদিনই সেতু পাড়ি দিয়ে রাজধানীতে যেতে শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে বসেন জেলা সদরের সুমি আক্তার। ধারণা ছিল, মাত্র দেড় ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে তাঁকে বহন করা বাসটি। কিন্তু ঢাকা পৌঁছাতে সময় লেগেছে চার ঘণ্টারও বেশি।

যানজটের কারণে জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা এবং সরু সড়ক অতিক্রম করতে সুমি আক্তার যে বাসটিতে চড়েছিলেন সেটির লেগেছে ৩ ঘণ্টা। সংযোগ সড়ক থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে লাগে ১ ঘণ্টারও কম।

পদ্মা সেতুর সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর থেকে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি একনেক। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় চলতি জুনে। কিন্তু কাজ সম্পন্ন হতে এখন বহু বাকি। মূলত এই সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় সুমি আক্তারের মতো যাত্রীদের এত দুর্ভোগ।

সুমি আক্তার আক্ষেপ করে প্রতিবেদককে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হলেও তার পুরোপুরি সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। সরু সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।’

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সড়ক ও ২৭টি কালভার্ট উন্নয়নে ৩৯১ কোটি ও দুটি সেতু নির্মাণে ৫৯ কোটি টাকা। ৩টি প্যাকেজে ভাগ করা প্রকল্পে প্রথম প্যাকেজে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা শহর থেকে জাজিরা পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ।

তৃতীয় প্যাকেজে থাকা জাজিরা থেকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। চার লেনের সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও প্রাথমিকভাবে ৩৪ ফুট প্রস্থের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ২৬ জুন শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। বর্তমানে ৫টি পরিবহনের ৭০টি বাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব যানবাহনের চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক মো. হাবিব জানান, শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত কোনোমতে যাওয়া যায়। ওখান থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরবর্তী ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিকশাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে আসে। আমরা ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচ্ছি।’

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটি অনুমোদনের পর করোনা মহামারিতে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া প্রথম বছর অর্থ বরাদ্দের পরিমাণও ছিল কম। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। শরীয়তপুর থেকে জাজিরা পর্যন্ত সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া দুটি সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতিও ৩০ শতাংশ। আশা করি, আগামী দুই বছরের মধ্যে পুরো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত