Ajker Patrika

পত্রিকা বিক্রি করে দিন বদল নার্গিস খাতুনের

ইমদাদুল হক ইমরান, ধুনট (বগুড়া) 
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৫১
পত্রিকা বিক্রি করে দিন বদল নার্গিস খাতুনের

কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। সতিনের সঙ্গে সংসার করতে না পারায় বিচ্ছেদ হয়। ভাইদের জন্য সন্তানসহ ঠাঁই পাননি বাবার বাড়িতে। সে সময় মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। কিন্তু সংসার কোনোভাবেই চলছিল না। শুরু করেন সংবাদপত্র বিক্রির কাজ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

সংবাদপত্র বিক্রির আয়ে জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন এখানে।

বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। আজও সংবাদপত্র বিক্রি করে চলেছেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সংগ্রামী জীবনযাত্রায় দিনবদলের এক অনন্য উদাহরণ খবরের ফেরিওয়ালা নার্গিস খাতুন। প্রতিদিন হেঁটে ৩২ বছর ধরে তিনি ধুনট ও সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার অলিগলিতে খবরের কাগজ বিক্রি করেন।

নানা প্রতিকূলতার কারণে এ পেশায় নারীরা আগ্রহ দেখান না। কিন্তু হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়। সেটাই করে দেখিয়েছেন হার না মানা সংগ্রামী নারী হকার নার্গিস।

আত্মনির্ভরশীলতায় এই নারী হকার নীরবে হয়ে ওঠেন নারী সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। নার্গিস কাজীপুরের পাঁচগাছি গ্রামের বাসিন্দা।

নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। সতিনের সঙ্গে স্বামীর সংসার করতে হয়েছে তাঁকে। তাই বেশি দিন টেকেনি সংসার। বিচ্ছেদ হওয়ায় শিশুসন্তান কোলে নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। কিন্তু ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতেও ঠাঁই হয়নি। এ সময় তাঁর জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

তখন কারও অনুগ্রহের অপেক্ষায় না থেকে বেছে নেন এই খবরের কাগজ বিক্রির মতো এ চ্যালেঞ্জিং পেশা। প্রতিদিন বিক্রি করেন ২০০-৩০০টি পত্রিকা। এতে লাভ হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। সংবাদপত্র বিক্রির আয় দিয়ে গ্রামে ৫ শতক জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন নার্গিস।

এ বিষয়ে নার্গিস খাতুন বলেন, ‘সংসার ভেঙে যাওয়ার পর বাবার বাড়িতেও ঠাঁই না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। সে সময় মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। অবসরে করেছি নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ। কিন্তু এ কাজ করে সংসার কোনোভাবেই চলছিল না। তাই একদিন সাহস করে শুরু করেছি সংবাদপত্র বিক্রির কাজ। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাইনি।’

নার্গিস খাতুন জানান, মোবাইল ফোন আসায় এখন যদিও পত্রিকা বিক্রি অনেক কমে গেছে। তারপরও বিধবা মা, ছেলে, ছেলেবউ ও নাতনিকে নিয়ে ভালোই আছেন তিনি। বাকি জীবনটা পত্রিকা বিক্রি করেই কাটাতে চান। কেননা সংবাদপত্র বিক্রি করেই ভালো চলছে তাঁর সংসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধুনট উপজেলার সংবাদপত্রের এজেন্ট জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর নার্গিস তাঁর কাছ থেকে পত্রিকা কিনে বিক্রি করেন। মাঝেমধ্যে পত্রিকা বেশি পরিমাণে দিলেও তিনি বিক্রি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত