Ajker Patrika

অং সান সু চির বিরুদ্ধে প্রথম রায়, ৪ বছরের জেল

রয়টার্স, লন্ডন
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০৫
অং সান সু চির বিরুদ্ধে প্রথম রায়, ৪ বছরের জেল

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। রাজধানী নেপিডোর ওই আদালত গতকাল রায় ঘোষণা করেন। উসকানি দেওয়ার এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের অভিযোগে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম রায়। একই অভিযোগে সু চির সরকারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকেও গতকাল চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সমালোচকেরা এ রায়কে ‘প্রহসনমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সু চিকে অজ্ঞাত স্থানে বন্দী রাখা হয়েছে। এদিকে অভ্যুত্থানে সু চির সরকারের পতনের পর থেকে মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন ও সংঘর্ষে দেশটিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সু চিকে বন্দী করার পরই তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে উসকানির অভিযোগে দায়ের মামলায় ২ বছর এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের মামলায় ২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। মামলার তথ্যমতে, ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সু চির দল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানায়। এই মামলায় উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর মামলার তথ্যমতে, ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন

সামনে রেখে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রচারণা চালিয়েছে সু চির দল। জান্তা সরকারের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে ওই প্রচারণা চালানো হয়েছে, যা জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের লঙ্ঘন।

ওই দুই মামলা ছাড়াও সু চির বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর মধ্যে তাঁর সঙ্গে লাইসেন্সবিহীন ওয়াকিটকি ও সিগন্যাল জ্যামার রাখা, রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ, ধারণ অথবা প্রকাশ অথবা অন্যকে জানানো, নির্বাচনে কারচুপি এবং দুর্নীতি দমন আইনের লঙ্ঘন অন্যতম।

সু চির বিরুদ্ধে গতকালের রায়টি ঘোষণা করা হয় রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জনসংযোগ দপ্তর এ মামলার রায় ঘোষণার ব্যাপারে আগে থেকে কিছু জানায়নি। সু চির আইনজীবীদেরও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। মামলার রায়ের বিষয়ে জানতে জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য সু চির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার বিষয়টি মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে।

সু চির বিরুদ্ধে দায়ের মামলাগুলোকে ভিত্তিহীন এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে তাঁর দল ও সমর্থকেরা।

এদিকে সু চির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার ঘটনায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোর্সে বলেছেন, ‘এই রায় হাস্যকর।’

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুস সু চিকে দণ্ডিত করে রায় ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সংকুচিত করতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের আরেকটি ভয়ংকর চেষ্টা এটি।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখা চীন কিছুটা মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাঁর দেশ মিয়ানমারের সব পক্ষের প্রতি সংবিধান ও আইনি পরিকাঠামো মেনে নিজেদের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করার এবং অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত