Ajker Patrika

কলম্বিয়ার উল্টো বাড়ি

সাইরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০৮
কলম্বিয়ার উল্টো বাড়ি

ঘুম থেকে উঠে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সিলিংয়ে বিছানা পাতা। তাতে রয়েছে বালিশও। পাশে রাখা বিরক্তিকর অ্যালার্ম ঘড়িটাও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশে তাকিয়ে দেখলেন, দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো উল্টে আছে। ঘড়ির কাঁটা ঠিকই ঘুরছে, কিন্তু উল্টো দিকে।

এ অবস্থায় অনেকেই ভাবতে পারেন স্বপ্নের রাজ্যে আছেন। মহাশূন্য এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নিয়ে যাদের জানাশোনা আছে, তাঁরা হয়তো ভাবতে পারেন, ‘মহাকাশেই চলে এলাম নাকি!’ নির্মাতা ও অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ (১৯৪০) সিনেমার কথাও মনে হতে পারে কারও কারও। ওই ছবিতে উড়োজাহাজে থাকা দুজন দেখতে পান, তাঁদের নিচের দিকে আকাশ, আর ওপরের দিকে পৃথিবী।

স্বপ্নের রাজ্য কিংবা মহাকাশ নয়, পৃথিবীতেই এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হবে। কলম্বিয়ার গুয়েতাভিতায় রয়েছে এমন একটি বাড়ি, যা উল্টো করে বানানো। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, বাড়িটা হয়তো পরম যত্নে কেউ উল্টে দিয়েছে। বাড়ির সামনের গাড়িটা অবশ্য সোজাই রয়েছে।

বাড়ির ভেতরে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে। ঘরে ঢোকার পরই মনে হবে, আপনি সিলিংয়ের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ইনসেপশন’ (২০১০) সিনেমার মতো দেয়াল দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আর ওপরের দিকে রয়েছে সোফা, চেয়ার, টেবিল।

মহামারির এ বিরক্তিকর সময়ে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতার অদূরে ‘কাসা লকা’ নামক এ বাড়িতে ক্ষণিকের জন্য হলেও বিমোহিত হওয়ার স্বাদ পাচ্ছেন পর্যটকেরা। এর নকশা করেছেন অস্ট্রিয়ার ফ্রিজ শল। তিনি এখন পরিবারসহ কলম্বিয়াতেই থাকেন। ‘কাসা লকা’ একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ ‘পাগলাটে বাড়ি’।

সৃষ্টিশীল এ মানুষটি বলেন, ‘ঘর নিয়ে আমার পরিকল্পনা জানার পর সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল, যেন আমি একটা পাগল। বাড়ির প্রতিটি আসবাব কিনতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রতিটি জিনিস সাজাতে হয়েছে উল্টোভাবে। ফলে কর্মীদেরও কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল।’

২০১৫ সালে নাতি-নাতনিদের নিয়ে অস্ট্রিয়ায় ঘুরতে গিয়েছিলেন শল। তখন এমন একটি বাড়ি দেখেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল বাড়ির কাজ। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেরি হচ্ছিল। চলতি বছরের প্রথম দিকে কাজ শেষ হলে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় বাড়িটি। এরপর শুরু হয় দর্শনার্থীদের ভিড়। দর্শনার্থী লিনা গুতিয়েরেজ বলেন, ‘মনে হচ্ছে মহামারি থেকে সরাসরি সুখের কোনো রাজ্যে এসে দাঁড়িয়েছি। লকডাউন নামক একটা ফাঁদ থেকে বেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার পর আনন্দের খোরাক পেয়েছি।’

রয়টার্সের প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা মেলে এ উল্টো আনন্দ বাড়ির। বাড়ির সামনে ভিড় করে আছেন অনেকেই। আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা ছবি তুলছেন। দল বেঁধে গান গাইছেন। ভেতরে উল্টো করে রাখা সিঁড়িতে হাঁটছেন কেউ কেউ। তবে বাথরুমের দিকে গিয়ে থমকে যেতে হয়। কমোডের নিচে গিয়ে দাঁড়ানোর আগে ভাবতে হচ্ছে। তবে একজন গিয়ে ঠিকই দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আরে! এতে ময়লা নেই তো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত