Ajker Patrika

বোরোর ফলন কমার আশঙ্কা

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৩: ৫৩
Thumbnail image

ঝোড়ো বাতাসে মাঠের পর মাঠজুড়ে শুয়ে পড়েছে পাকা ধান গাছ। শ্রমিকের সংকটে এই ধান ঘরে তুলতে পারছেন না চাষি। এরই মধ্যে হওয়া বৃষ্টির কারণে শিষের ধান অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা।

এবার বোরোর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে যাঁরা ধান কেটেছেন, তাঁরা গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক কম পেয়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ এখনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, রাজশাহীতে এ বছর ৬৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

গত রোববার বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ি, ঈশ্বরীপুর, হাতিবান্ধা, কাঁকনহাট এবং তানোর উপজেলার সরনজই ও কালীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমির ধান শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জমিতে ধানের শিষ থেকে বের হচ্ছে নতুন গাছ। গোদাগাড়ীর হাতীবান্ধা এলাকায় এক দাগে পৌনে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষক সুরমান আলী। রোববার বিকেলে শ্রমিকেরা তাঁর জমির ধান কাটছিলেন।

কথা হলে সুরমান বলেন, ‘এই জমিতে গতবার বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পেয়েছি। এবার বাতাসে ধান পড়ে গেছে। এতে শিষ থেকে ধান ঝরে পড়েছে। আবার জমিতে পানি জমায় শিষের ধান থেকে গাছ বের হতে শুরু করেছে। এবার বিঘা প্রতি ১৫ মণ ফলন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার খড়ও পাওয়া যাবে না।’

ফুলবাড়ি মাঠে ছেলে বিপ্লব হোসেনকে নিয়ে নিজের দেড় বিঘা জমির কাটা ধান উল্টিয়ে দিচ্ছিলেন কৃষক সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ‘শিষের ধানে নতুন গাছ গজাতে শুরু করেছে। অঙ্কুরিত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। মাড়াইয়ের সময় এগুলো পাতান হয়ে উড়ে যাবে।’ দুই কিলোমিটার দূরে ঈশ্বরীপুর এলাকায় তাঁর আরও আড়াই বিঘা জমি আছে। সে জমির ধানেরও একই অবস্থা বলে জানান সাইফুল।

ধামিলা গ্রামের কৃষি শ্রমিক চন্দন বিশ্বাস বলেন, গত বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ ফলন হয়েছে। এবার ঈদের আগে থেকেই তিনি ধান কাটছেন। কোনো কৃষকের জমিতে তিনি বিঘায় ১৫ থেকে ১৬ মণের বেশি ফলন দেখেননি। ধান শুয়ে পড়ায় এবং অঙ্কুরিত হওয়ার কারণে ফলন কম বলে তিনি জানান।

রোববার সন্ধ্যায় গণকের ডাইং এলাকায় ধান মাড়াইয়ের পর শ্রমিকদের সঙ্গেই ওজন করে দেখলেন বর্গাচাষি বিপুল সরকার। বর্গা নেওয়া দুই বিঘা জমিতে তাঁর ধান হলো ৩২ মণ। এর মধ্যে বিঘা প্রতি পাঁচ মণ করে ১০ মণ জমির মালিকের জন্য আলাদা করে রাখলেন বিপুল। শ্রমিকদের দিতে হলো আরও আট মণ। বাকি ১৪ মণ ধান থাকল বিপুলের।

বিপুল বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আমার নিজের ধান থাকল ১৪ মণ। এই ভেজা ধান বড়জোর ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা যাবে। ধান বেচে পাওয়া যাবে ১৪ হাজার টাকা। অথচ দুই বিঘা জমির আবাদেই ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত দিনের খাটাখাটুনি সবই লস।’

বিপুল আরও জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকার খড় পাওয়া যেত। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় এবার খড় করা যায়নি। খড় হলে লোকসানটা কোনোরকমে পুষিয়ে নেওয়া যেত।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কিছু এলাকায় এ ধরনের সমস্যা আছে। তবে সব জায়গায় না। আর ক্ষতিপূরণের আশায় কৃষক সব সময় ক্ষতির কথা বেশি করে বলে। আসলে ক্ষতি অত বেশি না। আমরা এখনো আশাবাদী যে ফলন বিপর্যয় হবে না। যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্জন হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত