Ajker Patrika

দুই শতকের সূর্যপুরী আমগাছ

আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২৮
দুই শতকের সূর্যপুরী আমগাছ

দূর থেকে দেখলেই মনে হবে বিশাল আকৃতির বট কিংবা এজাতীয় কোনো গাছ নিজেকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলে বোঝা যায়, এটি আসলে একটি আমগাছ। প্রায় তিন একর জমির ওপর ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাব্দী প্রাচীন সূর্যপুরী জাতের আমগাছটি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামে গেলে গাছটির দেখা পাওয়া যায়। অনেকেই গাছটি দেখতে এখানে ছুটে আসেন। ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে করে সরাসরি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পৌঁছানো যায়। আকাশপথে যেতে চাইলে আগে সৈয়দপুর যেতে হবে। এর পর সেখান থেকে সড়কপথে বালিয়াডাঙ্গী যেতে হবে। এ ছাড়া রেলপথেও যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সৈয়দপুর অথবা দিনাজপুর গিয়ে সড়কপথে বালিয়াডাঙ্গী যেতে হবে। উপজেলা সদর থেকে ভ্যান, বাস বা মিশুকে চেপে সহজেই পৌঁছানো যায় হরিণমারী গ্রামে।

স্থানীয় সাইদুর রহমান ও নূর ইসলামের জমিতে দাঁড়িয়ে আছে আমগাছটি। তাঁরা জানান, পূর্বপুরুষের লাগানো এ গাছটির মালিকানা তাঁরা পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন। পূর্বপুরুষের কথা অনুযায়ী গাছটির বয়স ২২৪ বছরের বেশি।

সম্প্রতি হরিণমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির আমগাছটি ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাণ্ড খুব বেশি বড় না হলেও এর ডালগুলো অনেক বড়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এসব। বয়স কিংবা অতি ভার—যে কারণেই হোক, কোনো কোনো ডাল একেবারে মাটি ছুঁয়েছে। দেখলে মনে হবে, গা এলিয়ে যেন ধুলোমাখা মাটিতে বিশ্রাম করছে ডালগুলো। গাছটি দেখতে অনেকেই এসেছেন। তবে বিনা মূল্যে গাছের ছায়াতলে যাওয়া যাবে না। রীতিমতো টিকিট কেটে গাছ দর্শন করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। টিকিটের মূল্য ১০ টাকা।

শুধু কী তাই, এই গাছের আমেরও চাহিদা রয়েছে। গত মৌসুমে এই গাছের আম তিন বছরের জন্য কিনে নিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সোলেমান আলী। তিনি জানালেন, বাজারে অন্য বাগানের সূর্যপুরী আমের তুলনায় এ গাছের আম বিক্রি হয় তিন-চারগুণ বেশি দরে।

সম্প্রতি নীলফামারী থেকে গাছটিকে দেখতে এসেছিলেন কলেজছাত্র আসাদুল হক। তিনি বলেন, ‘বন্ধুমহল অনেকেই এসে গাছটি দেখে গেছে। আমার আসার সুযোগ হয়নি। তাই দেখতে এসেছি। ছবি ও ভিডিও দেখে যতটা বড় মনে করেছিলাম গাছটিকে, এসে দেখি তার চেয়েও বড়।’ নীলফামারী থেকে আসা স্কুলশিক্ষক মমতাজ উদ্দীন জানান, ‘ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউবে আমগাছটির ভিডিও দেখে গাছটি স্বচক্ষে দেখার আগ্রহ হয়। তাই সপরিবারে চলে এসেছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আকালু আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমগাছটি ঘিরে ছোটখাট পর্যটন গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী আসে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার মানসম্পন্ন ব্যবস্থা করতে পারলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

বালিয়াডাঙ্গীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন বলেন, গাছটি রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে জায়গাটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানোও হয়েছে। খুব শিগগির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত