Ajker Patrika

৫২ বছরেও সেনবাগের চার শহীদের স্বীকৃতি মেলেনি

সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৬
৫২ বছরেও সেনবাগের চার শহীদের স্বীকৃতি মেলেনি

নোয়াখালীর সেনবাগবাসীর জন্য শোকাবহ এক দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে সেনবাগের চার যুবক নিহত হয়েছিলেন।

নিহত চার যুবক হলেন পৌর শহরের অর্জুনতলা গ্রামের অফিজের রহমান, বাবুপুর গ্রামের আবুল কালাম, জিরুয়া গ্রামের সামছুল হক ও মোহাম্মদপুর গ্রামের খুরশিদ আলম। ওই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে আরও ১৮ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ছয় দফা, ছাত্রদের ১১ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামে জাতি তখন ঐক্যবদ্ধ। এ সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭ নম্বর আসামি নোয়াখালীর সন্তান ফ্লাইট সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। সার্জেন্ট জহুরুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামসুজ্জোহাকে হত্যার প্রতিবাদে ১৯ ফেব্রুয়ারি সেনবাগে কালো দিবস পালনকালে পুলিশের গুলিতে চার যুবক নিহত হন।

দীর্ঘ ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। ঘটনার পর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনবাগে এসে শহীদদের কবর জিয়ারত করে পরিবারের লোকজনের হাতে ৫০০ টাকা অনুদান ও একটি করে সনদপত্র তুলে দেন।

সরকারিভাবে আর কোনো সুযোগ-সুবিধা মেলেনি। জিরুয়া গ্রামের শহীদ সামছুল হকের মা স্বামীর সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলের কবর পাকা করেন। তা ছাড়া ছেলের নামে একটি মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করার কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন।

চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে বছরের পর বছর সেনবাগ প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি এলে স্বজনেরা দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে চোখের জলে তাঁদের স্মরণ করেন।

গণমাধ্যমকর্মী ও পেশাজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে সেনবাগ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আহম্মদ চৌধুরী উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে চার শহীদের কবর পাকাকরণ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ করে দেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘চার শহীদের নামানুসারে চারটি রাস্তার নামকরণ ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করব। চার পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি ওপর মহলের বিষয়।’

যাঁদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জাতি আজ মুক্ত স্বাধীন, উনসত্তরের পথ বেয়ে পরবর্তী সময়ে একাত্তরের স্বাধিকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ।

পাকিস্তানি পুলিশের সেদিনের বর্বরতার তিলক ধারণ করে আজও বেঁচে আছেন উনসত্তরে ডান হাতে গুলিবিদ্ধ পঙ্গু হরিয়ানা গ্রামের আহত মাস্টার নাছির উদ্দিন। এত দিনেও চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না মেলায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত