Ajker Patrika

ব্যাংকে জমা টাকার জাকাত দেবেন যেভাবে

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
ব্যাংকে জমা টাকার জাকাত দেবেন যেভাবে

প্রশ্ন: ব্যাংকে জমা টাকার জাকাত দিতে হবে? সব ধরনের অ্যাকাউন্টেই কি জাকাত আসে? এই জাকাত কখন, কীভাবে দিতে হবে? ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে দিয়ে দিলে কি আদায় হবে? ব্যাংকে জমা টাকার জাকাত দীর্ঘদিন না দিলে করণীয় কী? জানতে চাই।
ফারদিন হাসনাত, ঢাকা

উত্তর: জাকাত ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জাকাত আদায়ের অপরিহার্যতা ও অনাদায়ের শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমান নারী-পুরুষ নিসাবের মালিক হলে জাকাত ফরজ হয়। নিসাবের মালিক হওয়ার অর্থ—মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা এর সমপরিমাণ বা বেশি ব্যবসায়িক পণ্য, নগদ টাকা বা ব্যাংক ব্যালান্স থাকা এবং এগুলোর ওপর হিজরি তারিখ হিসেবে পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া। তখন সম্পদের আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)

সব ধরনের অ্যাকাউন্টেই জাকাত আসে: ব্যাংকের ব্যক্তিমালিকানাধীন সব ধরনের অ্যাকাউন্টই জাকাতযোগ্য। এতে গচ্ছিত টাকা ব্যক্তির নগদ অর্থ হিসেবে ধরা হবে। অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নিসাবের মালিক হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হলে তাঁকে নিজের স্বর্ণ-রৌপ্য, ব্যবসায়িক পণ্য ও নগদ টাকার সঙ্গে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকারও জাকাত দিতে হবে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট, দীর্ঘমেয়াদি ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদি সব ধরনের অ্যাকাউন্ট এই হুকুমের আওতাভুক্ত। যৌথ মালিকানাধীন অ্যাকাউন্টের টাকা আলাদা আলাদা হিসাব করা হবে। (ফাতাওয়ায়ে উসমানি) 

ব্যাংকে জমা টাকার জাকাত দেবেন যেভাবে: নিজের হাতে থাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ (স্বর্ণ-রৌপ্য, ব্যবসায়িক পণ্য, নগদ টাকা) ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত টাকা মিলিয়ে যেদিন নিসাব পূর্ণ হবে, সেদিন থেকে জাকাতবর্ষ শুরু হবে। এরপর বছরের মাঝখানে অতিরিক্ত যা জমা হবে, সবই নিসাবের সঙ্গে যুক্ত হবে। এগুলোর জন্য আলাদা বর্ষ হিসাব করা হবে না। তবে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের জমাকৃত টাকা ছাড়া ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুদ হিসেবে যা জমা হয়, তা জাকাতযোগ্য নয়; বরং এগুলো সওয়াবের নিয়ত না করে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দেওয়া চাই। (বায়হাকি ও ফাতাওয়া হিন্দিয়া)

প্রতি জাকাতবর্ষ শেষ হওয়ার পর নিজের হাতে থাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে যত টাকা হবে, তার আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে না জানিয়ে তার অ্যাকাউন্ট থেকে জাকাত বাবদ টাকা কেটে নেয়, তা জাকাত হিসেবে আদায় হবে না। অবশ্য অনুমতি নিলে অথবা আগে থেকে অনুমতি দেওয়া থাকলে আদায় হবে। (রদ্দুল মুহতার)

দীর্ঘদিন জমা সম্পদের জাকাত না দিলে: সাধারণত অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে অনেকে বছরের পর বছর জাকাত দেন না। বুঝে আসার পর কেউ যদি জাকাত দিতে চান, তাহলে নিসাব পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে যত বছর অতিবাহিত হয়েছে, সব বছরের জাকাত দিতে হবে। প্রথম বছরের জাকাত যত টাকা আসবে, দ্বিতীয় বছরে তা হিসাব থেকে বাদ যাবে। পরবর্তী বছরগুলোতেও একইভাবে হিসাব করা হবে। কয়েক বছর জাকাত দেওয়ার পর যদি সম্পদ নিসাব থেকে কমে যায়, তাহলে আর জাকাত দিতে হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ) 

উত্তর দিয়েছেন
মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত