Ajker Patrika

সেবায় সেরা রামেক হাসপাতাল

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১০
Thumbnail image

‘হাসপাতালে সেবা পেতে ভোগান্তি হলে ফোন করুন।’ দেয়ালে দেয়ালে এমন ব্যানার লাগানো আছে। আর ব্যানারে দেওয়া আছে খোদ হাসপাতালের পরিচালকেরই মোবাইল ফোন নম্বর। দিনে তো বটেই, রাত-বিরাতেও সে নম্বরে ফোন করেন রোগীর স্বজনেরা। অপরিচিত নম্বর হলেও ফোন ধরেন পরিচালক। শোনেন সমস্যার কথা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী রোগীর সেবার জন্য এমনই তৎপর। তিনি এখানে যোগ দেওয়ার পর হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর একের পর এক নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি কোভিড রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন।

এর স্বীকৃতিও পেয়েছে রামেক হাসপাতাল। ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার-২০২০’ অর্জন করেছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় এই প্রথম রামেক হাসপাতাল এমন পুরস্কার অর্জন করল। দেশসেরা তিনটি হাসপাতালের একটি হিসেবে রামেক হাসপাতালকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে এই পুরস্কারের সম্মাননা স্মারক নেন।

রামেক হাসপাতালটি ১ হাজার ২০০ শয্যার। রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের রোগীরা এখানে সেবা নেন। রোগী ভর্তি নেওয়ার পাশাপাশি বহির্বিভাগেও সেবা দেওয়া হয়। এখানে আগে ছিল বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের দালালের উৎপাত। সেবা নিয়েও নানা অভিযোগ ছিল রোগীদের। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী হাসপাতালের পরিচালক হওয়ার পর কমেছে দালালের উৎপাত। বেড়েছে সেবার মানও।

আগে এই হাসপাতালে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো না। এখন পরিচালককে জানিয়ে সাংবাদিকেরা হাসপাতালে ঢুকতে পারেন। আগে হাসপাতালটিতে একটিমাত্র প্যাথলজি ল্যাব ছিল। রোগীদের প্যাথলজি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিচালক আরও তিনটি ল্যাব গড়ে তুলেছেন। এখন হাসপাতালে একটি আউটডোর ও তিনটি ইনডোর প্যাথলজি ল্যাব আছে। এ ছাড়া একটি কার্ডিয়াক ল্যাবও করা হয়েছে। দুয়েকটি ছাড়া এখন হাসপাতালেই হচ্ছে সব পরীক্ষা। সরকার নির্ধারিত কম মূল্যেই রোগীরা প্যাথলজিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন।

হাসপাতাল পরিচালক শামীম ইয়াজদানী নতুন করে নির্মাণ করেছেন একটি লেবার ওয়ার্ড। হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা কখনো কখনো রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাই আনসার সদস্যদের মোটিভেশনের কাজটিও করছেন পরিচালক। তারপরও কোনো আনসার সদস্য না শোধরালে তাঁকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে ব্যাটালিয়নে। হাসপাতাল পরিচালকের সুপারিশের ভিত্তিতে কয়েকজন আনসার সদস্য চাকরিও হারিয়েছেন।

করোনার সময় যখন অনেক চিকিৎসক-নার্স কোভিড ইউনিটে যেতে ভয় পেতেন, তখনো রোজ ওই ইউনিটে ঢুকেছেন পরিচালক শামীম ইয়াজদানী। খোঁজ নিয়েছেন রোগীদের। সমস্যার কথা জানাতে করোনা রোগীর স্বজনেরাও পরিচালকের অফিসকক্ষে ঢুকেছেন অনায়াসেই। পরিচালক প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। তাই আগের চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে হাসপাতাল। ভেতরে আর থাকে না ঘাস-ঝোপঝাড়ের জঞ্জাল। হাসপাতালের সামনের জঙ্গল পরিষ্কার করে ফুলের বাগান করা হয়েছে। নতুন করে করা হয়েছে একটি গ্যারেজ। আর সবকিছু মনিটরিং করতে পরিচালক হাসপাতালজুড়ে লাগিয়েছেন ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। নিজের অফিসে বসেই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ইনচার্জ মো. আশরাফুল আলী বলেন, আগের পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলা যেত না। বর্তমান পরিচালক অন্তত সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তারপর সমাধানের চেষ্টা করেন। তাঁর কারণে হাসপাতালের চেহারা বদলে গেছে। মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হচ্ছে। তাই এবার সেরা হাসপাতালের পুরস্কার এসেছে।

হাসপাতাল পরিচালক শামীম ইয়াজদানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রামেক হাসপাতাল আগে কখনো সেরার তালিকায় স্থান পায়নি। এবারই প্রথম সেরা তিনে স্থান পেয়েছে। এ অর্জন হাসপাতালের প্রতিটি সদস্যের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেবা নিশ্চিত হচ্ছে। ছোটখাটো কিছু সমস্যার সমাধান হলে হাসপাতালের সেবার মান আরও বাড়বে। এগুলোও সমাধান করা হবে। জনগণ যাতে হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়, আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত