Ajker Patrika

এভারেস্ট ও সেভেন সামিটজয়ী প্রথম নারী

মোশারফ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১১: ২৫
এভারেস্ট ও সেভেন সামিটজয়ী প্রথম নারী

জুনকো তাবেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করা প্রথম নারী। পর্বতারোহী হিসেবে তাঁর অর্জন অনেক। তবে ৩৬তম এভারেস্টজয়ীর তকমাটাই তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। এ ছাড়া তিনি সাত মহাদেশের সাতটি শীর্ষ চূড়ায় আরোহণকারী হিসেবে প্রথম। এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে তাঁর অসীম সাহস ও দক্ষতার কারণে।

১৯৩৯ সালে জাপানের ফুকুশিমায় জন্ম তাবেইর। ১০ বছর বয়সে তিনি শিক্ষাসফরে গিয়েছিলেন আসাহি ও চৌসু পাহাড়ে। এরপর পাহাড়জয়ের প্রেমে পড়েন তিনি। তাবেই শৌয়া নারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্যে ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে পড়াশোনার সময় একটি পর্বতারোহী ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ছিলেন সেই ক্লাবের একমাত্র নারী সদস্য। পুরুষেরা তাঁর সঙ্গে পর্বতারোহণে যেতে চাইতেন না। কিন্তু তাবেই দমে যাননি। কঠোর অধ্যবসায় এবং কিছু বয়স্ক আরোহীর সঙ্গে ১৯৬৯ সালে তিনি নারীদের জন্য পর্বতারোহী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
গত শতকে জাপানে নারীরা ঘরের কাজের মধ্যে আবদ্ধ ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তাবেই এই সামাজিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই খুদে নারী জাপানের মাউন্ট ফুজি থেকে ম্যাটারহর্ন পাহাড় জয় করেন!

১৯৭২ সালে জাপানের ‘একজন স্বীকৃত’ পর্বতারোহী হিসেবে স্বীকৃতি পান তাবেই। তাঁর নারী পর্বতারোহী ক্লাবের মূল ধারণা ছিল, নারীরাও দূরদূরান্তের দুঃসাহসী অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাবেইর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে নেপালের অন্নপূর্ণা পাহাড়ের অভিযান সফলতা পায়। এরপর তিনি এভারেস্ট জয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন। চার বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হয় জাপানি নারীদের এভারেস্ট অভিযান। এ যাত্রার ১৫ জন কর্মজীবী নারীর মধ্যে কেউ ছিলেন শিক্ষক, কেউ কম্পিউটার প্রোগ্রামার আবার কেউ ছিলেন কাউন্সেলর। এ ছাড়া তাবেই এবং আরেকজন নারী ছিলেন সন্তানের মা। এ সময় পর্বতারোহণের জন্য তহবিল খুঁজে পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য একটি কাজ। বেশির ভাগ স্পনসর তাঁদের পর্বতারোহণের পরিবর্তে শিশু লালনপালনে মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন।

পর্বতে উঠছেন জুনকো তাবেই।	ফলে গ্রুপের সদস্যদের নিজেদের বেশ বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হয়। তাঁরা স্লিপিং ব্যাগ তৈরি করে, স্কুলের দুপুরের খাবার থেকে বেঁচে যাওয়া জ্যামের প্যাকেট সংগ্রহ করে এবং পুনঃ ব্যবহৃত উপকরণ বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করেন।

১৯৭৫ সালের বসন্তে এই গ্রুপ এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার অভিযান শুরু করে। ৯ হাজার ফুট ওপরে ক্যাম্প করার সময় তুষারপাতে আক্রান্ত হয় পুরো দল। দলের অন্য কেউ আহত না হলেও তাবেই বরফে চাপা পড়ে জ্ঞান হারান। তবে তাঁর দলের ছয় শেরপা তাঁকে বরফের নিচ থেকে তুলে আনতে সক্ষম হন।

এই অভিযানে আঘাতের কারণে তাবেই পরের দুদিন হাঁটতে পারেননি। তুষারপাতের ১২ দিন পর পৃথিবীর প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৯২ সালে তাবেই সেভেন সামিট জয় করেন।

তাবেই জাপানের ‘হিমালয়ান অ্যাডভেঞ্চার ট্রাস্টে’র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই ট্রাস্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, হাইকার ও পর্বতারোহীদের হাত থেকে পরিবেশ রক্ষা করা।

১৯৭২ সালে জাপানের ‘একজন স্বীকৃত’ পর্বতারোহী হিসেবে স্বীকৃতি পান তাবেই। তাঁর পর্বতারোহী ক্লাবের মূল ধারণা ছিল, নারীরাও দূর-দূরান্তের দুঃসাহসী অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন।

২০১২ সালে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু তিনি পর্বতারোহণ থেকে পিছিয়ে যাননি। সব প্রতিকূলতা ঠেলে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থাকেন। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর ৭৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তাবেই পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি পর্বতারোহণের ইতিহাসে অন্যতমদের একজন। জুনকো তাবেইর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে নারীরা আজ পর্বতারোহণের জগতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত