Ajker Patrika

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, উত্তরে অবনতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১: ০৯
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, উত্তরে অবনতি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। দফায় দফায় বন্যায় খাদ্য, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটে ভুগছে বানভাসি মানুষ। অনেক এলাকায় স্কুল-কলেজে পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে সিলেট অঞ্চলে পানি কমে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাড়া বাকিগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। 

কুড়িগ্রামে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জেলার সাত উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে দুধকুমার ও তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মূসার চর, ব্যাপারীপাড়া নতুনচর, পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চর এবং উপজেলার হাতিয়া ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। বসতভিটা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকাতেই রান্না ও খাবার সেরে নিচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দী মানুষ। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলছেন বন্যার্তরা। 

এ দিকে, চিলমারীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলায় ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর
গাইবান্ধায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার এবং শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্ট ঘাঘট নদের পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। 

বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলায় ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

জামালপুরে যমুনায় বিলীন অনেকের বসতভিটা
জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙনও। ইতিমধ্যে অনেকের বসতভিটা যমুনার গর্ভে চলে গেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা স্থলপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেক স্থাপনা।

জামালপুর পাউবোর পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান বলেন, বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ফলে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন পানি আরও বাড়তে পারে। 

গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় বিলীন শতাধিক বাড়ি
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ২৫০টির বেশি পরিবার ভাঙন-আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, রান্নার চুলা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষ। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক বিঘা জমির বাদামখেত ও আমন ধানের বীজতলা।

গাইবান্ধায় যমুনার পানি উপচে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। গতকাল সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া পাড়ায়রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীতে পানিপ্রবাহ সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। 

বগুড়ায় যমুনার ৬ পয়েন্টে তীব্র ভাঙন
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি পেলেও ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনো কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়নি। যমুনার ছয়টি পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইছামারা অংশে ভাঙন প্রবল। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। 

জকিগঞ্জ ছাড়া সিলেটে উন্নতি
সিলেটের সবগুলো উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনতি হচ্ছে জকিগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন ডাইক ভেঙে উজানের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করার ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো থেকে পানি নামতে থাকলেও ভাটির উপজেলাগুলোয় গিয়ে বন্যার চাপ ফেলছে। এদিকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৯৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৬০টি গ্রামের ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ জন মানুষ বন্যাকবলিত। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৯ হাজার ২৩৪ জন।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিলেটের নদ-নদীতে পানির উন্নতি আশা করা যাচ্ছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম বলেন, জকিগঞ্জে নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত