Ajker Patrika

কার জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছে হল-মার্ক

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১২: ২৯
কার জমি বন্ধক রেখে  ঋণ নিয়েছে হল-মার্ক

জমির মূল মালিক নিলুফা হক নামের এক নারী। জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিকবার সাবকবলা তৈরির করে দুই হাত ঘুরে সেই জমি গেল বিতর্কিত হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদের কাছে। ওই জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছে হল-মার্ক গ্রুপ। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর মূল মালিক জানতে পারলেন, জমিটি আর তাঁর কাছে নেই। এর পর থেকে সালিসি বৈঠক, আদালত, থানা-পুলিশের কাছে ছুটতে ছুটতে হয়রান এই নারী এখনো উদ্ধার করতে পারেনি ১০ কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও থানা-পুলিশের তদন্ত বলছে, নিলুফা হকের ওই জমি নিয়ে ভয়ংকর জালিয়াতি হয়েছে। জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে আদালতেও। এরপরও হল-মার্ক গ্রুপ বলছে, তারা ওই জমি কিনে নিয়েছে। আর থানা-পুলিশ বলছে, হল-মার্ক কর্তৃপক্ষ ওই জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। নিলুফা হক জমির প্রকৃত মালিক হলেও তাঁকে জমির দখল পেতে ব্যাংকের ঋণের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আসতে হবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিজের জমির দখল কীভাবে ফিরে পাবেন, তা নিয়ে দিশেহারা বিধবা ওই নারী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ঢাকার সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের নগরচরা মৌজায় মতিয়ার রহমান ও তাঁর ভাই তারা মিয়ার কাছ থেকে ৯২ শতাংশ জমি কিনেছিলেন সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা ফজলুল হকের স্ত্রী নিলুফা হক। এর পর থেকে পাশের ১৫৭ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিসহ ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু একটি জালিয়াত চক্র ২০০৫ সালে অন্য এক নারীকে নিলুফা সাজিয়ে সেই জমি জনৈক সামসুদ্দোহার নামে সাবকবলা দলিল করে নেয়। এরপর সামসুদ্দোহার কাছ থেকে জনৈক মাহবুবুর রহমানের নামে সাবকবলা দলিল করে নেয় তারা। সাভার সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এই দলিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিতর্কিত হল-মার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদের কাছে তারা ওই জমি বিক্রি করে দেয়। হল-মার্কের হাতে জমি যাওয়ার পরেই ভয়াবহ এই জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারেন জমির মূল মালিক নিলুফা হক।

ভুক্তভোগী ওই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হল-মার্কের কাছে জমি বিক্রির পর জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারি। এরপর স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সামসুদ্দোহা ও মাহবুবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডি ও সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।’

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে সিআইডি সামসুদ্দোহাকে সাবকবলা করে দেওয়া দলিলে নিলুফা হকের স্বাক্ষর আর সাভার সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের বালাম বইয়ে দেওয়া আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় দুটো স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি।

সিআইডির তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামসুদ্দোহা ও মাহবুবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন নিলুফা হক। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দলিলে উল্লিখিত ঠিকানায় বা অন্য কোথাও অভিযুক্তদের হদিস পায়নি পুলিশ। অর্থাৎ, তারা দলিলে যে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছে, তা-ও ভুয়া।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব দাস বলেন, সামসুদ্দোহা নামে কোনো ব্যক্তির কাছে জমির প্রকৃত মালিক (নিলুফা হক) জমি বিক্রি করেননি। কতিপয় ব্যক্তি ছদ্মনাম ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জালিয়াতি করে একাধিক সাবকবলা দলিলের মাধ্যমে নিলুফা হকের জমির মালিক হিসেবে তা হল-মার্কের এমডি তানভীর মাহমুদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

নিলুফা হকের আত্মীয় শফিকুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে জমি বিক্রির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁরা সাভার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে নামজারি পেয়েছেন। এরপরও পুলিশ ওই জমিতে তাঁদের কাজ করতে দিচ্ছে না।

জানতে চাইলে হল-মার্কের কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা দলিল দেখে মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ২০১১ সালে জমিটি ক্রয় করেছি। এর পর থেকে ওই জমি আমাদের দখলে আছে। আমরা নিলুফা হককে চিনি না।’

যোগাযোগ করা হলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, হল-মার্ক কর্তৃপক্ষ ওই জমি বন্ধক রেখে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। নিলুফা হক জমির প্রকৃত মালিক হলেও তাঁকে জমির দখল পেতে ব্যাংকের ঋণের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আসতে হবে। অন্যথায় আদালতের অনুমতি নিয়ে জমির দখল বুঝে নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত