Ajker Patrika

আঙুলের ছাপ!

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তার একটা সমাধান হওয়া দরকার। ইভিএমে ভোট করতেই হবে, আবার ইভিএমে ভোট হলে নির্বাচনে অংশ নেবে না—এ রকম হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান। পরে ১৫০টি নির্বাচনী আসনে ইভিএমে ভোট হবে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে, সে  দিকেই যাচ্ছে সামনের জাতীয় নির্বাচন।

রাজনৈতিক দলগুলো ২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনো স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ কথা সত্য, দেশি-বিদেশি আলামত দেখে বোঝা যাচ্ছে, এবার নির্বাচনের দিকে থাকবে গোটা পৃথিবীর চোখ।

ইভিএম নিয়ে ওঠা বিতর্ক থেকে একটা কথা পরিষ্কার হয়েছে, এই যন্ত্র পুরোপুরি নিখুঁত নয়। সরাসরি ব্যালট পেপারে নির্বাচন হলে, ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা থাকলে জাল ভোট হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। সম্প্রতি ইভিএমে আঙুলের ছাপ নিয়ে যে চিন্তাভাবনা চলছে, সে বিষয়ে কিছু কথা বলা দরকার। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট দেওয়ার সময় কারও আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন; অর্থাৎ ভোটারের  নাম, পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর মিলিয়ে দেখার পর যদি বুঝতে পারেন, ভোটদাতার পরিচয়ে কোনো সমস্যা নেই, তখন তিনি ভোটারের পরিবর্তে নিজের আঙুলের ছাপ দেন এবং তাতে ব্যালট ইউনিট সচল হয়। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য একটি আইনের প্রস্তাব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে এই সুযোগ দেওয়া হবে; অর্থাৎ কোনো ভোটকেন্দ্রে ৫০০ জন ভোটার থাকলে সর্বোচ্চ ৫ জন ভোটারকে এই সুযোগ দিতে পারবেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

মুশকিল হলো, সেই ভোটকেন্দ্রে যদি পাঁচের অধিক ভোটারের একই সমস্যা হয়, তাহলে তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? কেউ যেন নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব ফেলতে না পারে, সেটা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ইভিএমজনিত এই নতুন আইনের ক্ষেত্রে একটা কথা বলা জরুরি। আঙুলের ছাপ না মিললে এক ভোটকেন্দ্রে শতকরা ৫ জন যদি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সাহায্যে ভোট দিয়ে থাকেন এবং এরপর যদি আরও ৫ জন এসে একই সমস্যায় পড়েন, তাহলে কী হবে? আঙুলের ছাপ তো নানা কারণেই না-ও মিলতে পারে, সে ক্ষেত্রে তিনি কি ভোট দিতে পারবেন না?

খুবই জটিল সমস্যা। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অধিকার আছে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার। সুতরাং এ রকম একটি আইন হলে অনেকেই ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, যা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে। অবশ্যই এ ফাঁকটি বন্ধ করতে হবে। দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেন ভোট দিতে পারেন, সেই সুযোগ সৃষ্টি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাই ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপজনিত সংকট যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে ত্রুটিপূর্ণ ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিষয়টি নিয়েই তো নতুন করে ভেবে দেখা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত