Ajker Patrika

এক বছর ধরে বয়স্ক ভাতা বন্ধ, সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানলেন তিনি মৃত

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৮: ১০
Thumbnail image

তিন মাস পরপর নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেতেন জেলেখা বেগম। কিন্তু হঠাৎ ভাতা আসা বন্ধ। বেশ কয়েক মাস পর অনেকের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি নাকি মারা গেছেন! তাই তাঁর বদলে অন্যজনকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। 

জেলেখা বেগম ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সন্ধারই গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী। তাঁকে মৃত দেখিয়ে অন্যকে ভাতা দেওয়ার সঙ্গে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাদশাহ আলী ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারী স্বাক্ষরিত একটি মৃত্যু প্রত্যয়নপত্র সমাজসেবা অফিসে দেন। সেই প্রত্যয়নপত্রে জেলেখা বেগম ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর মারা গেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রত্যয়নপত্রে জেলেখা বেগমের স্থলে আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ওই প্রত্যয়নপত্রবলে জেলেখা বেগমের ভাতা স্থগিত করে আশরাফ আলীর নামে ভাতা চালু করে। সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রে মৃত জেলেখা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। 

জেলেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের যোগসাজশেই আমার ভাতাটি বন্ধ করে অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে।’ জেলেখা বেগমের প্রতিবেশী সোহেল রানা বলেন, ‘সমাজসেবা অফিস ও ইউপি সদস্য বাদশাহ আলী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এটি করেছেন, তা না হলে এক প্রত্যয়নপত্রেই কেন ভাতা বন্ধ হবে? তাঁরা কেন অনলাইনে মৃত্যুসনদ যাচাই করলেন না? এখন তো সব মৃত্যুসনদ অনলাইনেই দেওয়া হয়। এক প্রত্যয়নে যদি ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে ইউনিয়ন সমাজকর্মী আর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাজ কী?’ 

জেলেখা বেগম গতকাল শনিবার জানান, ভাতার টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়। কিন্তু এক বছর ধরে ভাতার টাকা না পাওয়ায় বেশ কষ্টে আছেন। বাধ্য হয়ে সমাজসেবা অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানেই জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন! 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বাদশাহ আলী বলেন, ‘বিষয়টি না বুঝে হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এমনটি আর হবে না।’ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, ‘অসাবধানতাবশত প্রত্যয়নটি দেওয়া হয়েছে। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের দায়িত্ব ছিল এটি যাচাই করা।’ 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা বিস্মিত হয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’ কেন যাচাই করা হলো না সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দায় এড়াতে পারব না। তবে কেন এমন ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে।’ 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, ‘বিষয়টি জানা মাত্রই ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। জেলেখা বেগমের ভাতা আবার চালুর প্রক্রিয়া করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত