Ajker Patrika

রাতের বেলা সড়ক-মহাসড়কে কতটুকু নিরাপদ নারীরা

রুবেল আহমেদ প্রিন্স
আপডেট : ৩১ মে ২০২১, ২২: ৪৫
রাতের বেলা সড়ক-মহাসড়কে কতটুকু নিরাপদ নারীরা

আশুলিয়া: সম্প্রতি আশুলিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী পোশাক শ্রমিক। এই ঘটনায় ওই ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে বাস চালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর বাকি পাঁচজন তিনদিন করে রিমান্ডে রয়েছে।

এজাহার মতে, ভুক্তভোগীর বোন মানিকগঞ্জে বসবাস করেন। তিনি সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে বাসে ওঠেন। রাত ৮টার দিকে আশুলিয়ার নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় পরিচিত দু–তিনজনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। রাত ৯টার দিকে নিউ গ্রামবাংলা মিনিবাসের হেলপার মনোয়ার ও সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম টঙ্গী স্টেশন রোডে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৩৫ টাকা ভাড়া চান। পরিচিত দুজনকে তিনি টঙ্গী স্টেশনে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী পরিচিত দুই পুরুষসহ তিনি মিনিবাসে ওঠেন। পথে আসামিদের কয়েকজন বাসে ওঠেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার আগেই তাদের তিনজন ছাড়া বাকি সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের আটকে রেখে আবার নবীনগরের দিকে নেওয়া হয়। পথে বাসের জানালা-দরজা আটকিয়ে তাঁকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে বাসের চালক, হেলপারসহ ছয়জন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদেরও মারধর করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে নবীনগর গলফ ক্লাব সংলগ্ন ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে পৌঁছালে সঙ্গের দুজনের চিৎকারে টহল পুলিশ এগিয়ে আসে এবং তাদের উদ্ধার করে।

এই ঘটনার পর থেকে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাতের বেলা সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করতে গিয়ে একজন নারী কতটুকু নিরাপদ। নারী পোশাক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন-কারখানায় সকালে কাজ শুরুর লক্ষ্যে প্রায় প্রতিটি পোশাক শ্রমিককে ভোর থেকে কর্মস্থলে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার যেসব শ্রমিকদের বাসা কারখানা থেকে একটু দূরে সেসব শ্রমিকেরা ভোরবেলাতেই দল বেধে রওনা হন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। এসব শ্রমিকদের জন্য অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রাখলেও অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ আবার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রাখেনি। আর যেসব কারখানার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই সেসব কারাখানার শ্রমিকেরা গণপরিবহনসহ বিভিন্ন পন্থায় কারখানায় কাজে যোগ দেন। সকাল বেলা এসব শ্রমিকেরা যেমনভাবে কর্মস্থলে কাজে যোগ দেন তেমনি রাতের বেলা কর্মস্থল থেকে একইভাবে শ্রমিকেরা তাদের ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে অনেক করখানায় অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকলে রাত ১২টার দিকেও ছুটি হতে দেখা যায়। আর মধ্য রাতে যেসব কারখানায় ছুটি হয় সেসব কারখানার শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে গিয়ে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। বিশেষ করে এই ভোগান্তি আরও বেড়ে যায় নারী শ্রমিকদের। রাতের বেলা সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা এমনিতেই কম থাকে তারপর রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।

আসমা আক্তার নামে এক নারী পোশাক শ্রমিক জানান, স্বাভাবিক দিনে তাঁর কারখানায় সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু হয়ে রাত ৮টায় ছুটি দেয়। কিন্তু যখন কারখানায় অতিরিক্ত অর্ডার থাকে তখন কর্তৃপক্ষ তাদের রাত ১২টা পর্যন্ত ওভার টাইম করায়। এতে করে রাত ১২টায় ছুটি হলে বাসায় ফিরতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হয়। তাই যেসময় বা মাসের যে দিনগুলোতে তাদের কারখানায় রাত ১২টা পর্যন্ত ওভার টাইম করানো হয় সেই দিনগুলোতে তার স্বামী কারখানায় গেটে আসেন তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে। অনেক শ্রমিক আবার দলগতভাবেও বাড়ি ফিরে যান বলে জানান এই নারী শ্রমিক। আবার যেসব শ্রমিক ভিন্ন এলাকায় থাকেন তাঁরা নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই রাতের বেলা অটোরিকশা বা দু-একটি বাস পেলে সেসব যানবাহনেই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন বলেও জানান এই নারী পোশাক শ্রমিক।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মিন্টু বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে যে সংখ্যক নারী পোশাক শ্রমিক কাজ করেন সেই হিসেবে এই অঞ্চলে নারী পোশাক শ্রমিকদের জন্য এখনো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। এই শ্রমিক নেতা ক্ষোভ নিয়ে আরও বলেন, তাঁরা নানা সময়ে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সভা-সমাবেশ করে আসলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। এই শ্রমিক নেতার ভাষ্য মতে, রাতের বেলা আশুলিয়ার বিভিন্ন রোডে চলাচল রত পোশাক শ্রমিকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার শাখা সড়কগুলোতেও এই নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলেও দাবি এই শ্রমিক নেতার।

তিনি আরও বলেন, রাতের বেলা অনেক কারখানায় ছুটি হয় কোন কোন কারাখানায় রাত ১২টার দিকেও ছুটি হয়। অনেক শ্রমিকই দূর থেকে কর্মস্থলে যোগ দেন। প্রায় সময় গণপরিবহনে ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। আর এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মাথায় নিয়েই অসহায় নারী শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় বলেও যোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।

এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এই শ্রমিক নেতা রাতের বেলা আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কগুলো পুলিশি টহল বৃদ্ধির দাবি জানান। পাশাপাশি থানা-পুলিশের সঙ্গে শিল্প পুলিশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য রাতের বেলা নজরদারি বাড়ানোর জোড় দাবি জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

দায়িত্ব পেয়েই ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ মাসুদ রানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত