Ajker Patrika

ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দেওয়া সেই নাফিজ কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দেওয়া সেই নাফিজ কারাগারে

র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বিশেষ তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে আলোচিত নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে (২৩) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল হোসেন তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে বিপুল পরিমাণ মাদক দ্রব্যসহ নাফিজকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

গতকাল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে নাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ দুপুরের দিকে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই শামীম হোসাইন কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। অপরদিকে নাফিজের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেন। আদালতের ভাটারা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা রণপ কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাতে গ্রেপ্তার করার পর নাফিজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাটারা থানায় মামলা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বসুন্ধরার ১৪ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা আসামি নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে নাফিজের ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৭টি মদের বোতল, নয়টি মদের খালি বোতল, মদের ২২টি বোতলের খালি বক্স, বিদেশি ব্রান্ডের ৩২ ক্যান বিয়ার, দুটি সিসা স্ট্যান্ড জব্দ করা হয়। এ ছাড়া তাঁর ব্যবহৃত পুলিশ লেখা একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদকে সামনে রেখে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মাদক বিক্রির জন্য নাফিজ এসব মাদক মজুত করেছিলেন। এর আগেও নাফিজ বিপুল বিদেশি মদসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

২০২১ সালের নভেম্বরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নাফিজ। তখন তাঁর এক বান্ধবীকেও আটক করে বাহিনীটি। সে সময় নাফিজের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়। ওই সময় তাঁর কাছ থেকে ওয়াকি-টকিসহ টেলি যোগাযোগ সামগ্রীও জব্দ করা হয়। তাঁর কাছে পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন ভিডিও পাওয়া যায়। তখন ভাটারা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে তিনটি মামলা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের দুটি মামলা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সম্প্রতি র‌্যাবকে নিয়ে ডয়চে ভেলের নির্মিত তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন নাফিজ। এরপরই আলোচনায় আসেন তিনি।

কিশোর আদনান হত্যা মামলায়ও অভিযুক্ত নাফিজ
২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষ। চিকিৎসার জন্য তাকে উত্তরা লুবানা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর জানা যায়, উত্তরায় ‘গ্যাং-কালচার’ নিয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে স্থানীয় কিশোরদের একটি অংশ। ‘নাইন স্টার’, ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ নামের গ্রুপে সক্রিয় কিশোরেরা শুরুতে মূলত পার্টি করা, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালানো এবং রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যার সর্বশেষ শিকার উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবির হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়। যাদের বিরুদ্ধে দোষী পত্র দেওয়া হয় তাদের মধ্যে কিশোর নাফিজ মোহাম্মদ আলমও ছিলেন। নাফিজসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯–এ বিচারকাজ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত