Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জে ভাইবোন হত্যা: আদালতে দুই আসামির স্বীকারোক্তি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১৯: ৩৭
কিশোরগঞ্জে ভাইবোন হত্যা: আদালতে দুই আসামির স্বীকারোক্তি

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে জমির সীমানায় গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাইবোনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ইমরান ও আরমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

আজ রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিন্নাত আরা আক্তারের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তাঁরা। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গতকাল শনিবার সকালে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে মো. ইমরানকে (২৬) এবং কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে আরমান মিয়াকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আরেক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬) হওয়ায় তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এর আগে গত শুক্রবার এ মামলার আসামি ফরিদা ইয়াসমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার আসামিরা হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের কুড়িমারা গ্রামের মো. আব্দুল কাদিরের ছেলে। অন্যদিকে নিহত ব্যক্তিরা হলেন একই এলাকার শামসুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল হাসান আলমগীর ও মেয়ে নাদিরা খাতুন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

ইমরান ও আরমানের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, শামসুল ইসলাম ও আব্দুল কাদির সম্পর্কে ভাই হয়। তাঁদের মধ্যে কিছুদিন ধরে জমির সীমানায় গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। গত বুধবার বিকেলে আব্দুল কাদির বিরোধীপূর্ণ জমির কয়েকটি চারা গাছ কেটে নতুন গাছের চারা রোপণ করেন। এর জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আসামিরা আবার জমিতে চারা গাছ রোপণ করতে গিয়ে দেখে আগের দিনের গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিয়েছে। তখন আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে গালাগাল করেন।  

এ সময় শামসুল ইসলাম, বড় ছেলে মাহমুদুল হাসান আলমগীর, স্ত্রী শাহিদা, মেয়ে নাদিরা, মেজো ছেলে হুমায়ন কবির ও ছোট ছেলে সালমান ঘর থেকে বের হয়ে তাঁদের গালি দিতে বারণ করেন। পরে শামসুল ইসলামের পরিবারের ওপর হামলা চালান আসামিরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন জানান, হামলার সময় আসামি ইমরান চাচাতো ভাই আলমগীরের ঘাড় চাকু দিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেন। আলমগীরকে বাঁচাতে তাঁর মা ও ভাইবোনেরা এগিয়ে গেলে আসামি ইমরান নাদিরার পেটে ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনাস্থলে আলমগীর মারা যান। হামলায় আলমগীরের মা, ভাই ও বোন গুরুতর আহত হন। এ সময় ঘটনাস্থলেই আলমগীর মারা যান। অন্যদিকে নাদিরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় শুক্রবার নিহত আলমগীর ও নাদিরা খাতুনের বাবা শামসুল ইসলাম বাদী হয়ে হোসেনপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আব্দুল কাদিরের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে শামসুল ইসলামের পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ। গ্রেপ্তাররা আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল, কোদাল, লোহার খুন্তি, দা ও চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’ 

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মূল অভিযুক্তসহ মোট চারজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনার পর পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিসএবি) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন, হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার ও হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান টিটু প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত