Ajker Patrika

জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণ: দুজনের সনদ বাতিল, আজীবন বহিষ্কার চারজন

জাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ১০: ৫২
জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণ: দুজনের সনদ বাতিল, আজীবন বহিষ্কার চারজন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভায় দুজনের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল ও চারজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভা হয় গত রোববার রাতে। সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভায় দুজনের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল ও চারজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ মামুনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বহাল থাকবে।

রেজিস্ট্রার জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও একই বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেনের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।

স্থায়ী বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী সাগর, একই বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহ পরান, একই বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী মো. হাসানুজ্জামান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর।

রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, ‘আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অছাত্ররা হল ত্যাগ না করলে অ্যাকাডেমিক সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল ও তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

প্রশাসনিক ভবনে তালা
গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা মারেন ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে উপাচার্যসহ সারা দিন নতুন প্রশাসনিক ভবনে কর্মচারী-কর্মকর্তারা প্রবেশ করতে পারেননি।

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও তাঁর সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র‌্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা। এ ছাড়া নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাঁদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, সিন্ডিকেট সভায় ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের স্থায়ী শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অব্যাহতি এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন উপাচার্য।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘উপাচার্য সময় চেয়েছিলেন। তিনি পূর্বে কথা না রাখলেও আমরা সময় দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন হয় এমন কোনো কর্মসূচি দিইনি। তবে উপাচার্য আবারও কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তথ্য-প্রমাণ থাকার পরেও সিন্ডিকেটে প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাই উপাচার্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত