Ajker Patrika

প্রতিদিন লুট হতো পদ্মার ৪ হাজার ট্রাক বালু

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১৩: ৫৯
Thumbnail image

নাটোরের লালপুরের পদ্মা নদীর চর থেকে বালু লুটের ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন আজ রোববার পর্যালোচনার জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া পদ্মা নদীর চরে ফসলি জমির পাশ থেকে প্রতিদিন ৭০টি ডাম্প ট্রাকে করে মোট ৪ হাজার ২০০ ট্রাক বালু তোলা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযুক্তরা হলেন, লালপুর উপজেলার বালিতিতা এলাকার স্থানীয় ঠিকাদার শরীফুল ইসলাম, দক্ষিণ লালপুরের মতিউর রহমান, বড়াইগ্রামের বনপাড়ার মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কালিকাপুর এলাকার মোস্তফা ব্যাপারী।

জানা গেছে, উপজেলার ঈশ্বরদী, লালপুর, বিলমাড়িয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটার প্রবাহিত পদ্মা নদীর উত্তর তীর। এই এলাকায় পদ্মা নদীর চর থেকে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ভূমিদস্যু ও বালু ব্যবসায়ীরা। বালু উত্তোলনের ফলে প্রস্তাবিত নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল, আশ্রয়ণ প্রকল্প, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা ভবন, বাজার, নদীরক্ষা বাঁধসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বালু ভর্তি ও খালি ট্রাক চলাচলে ফসলি জমির পাশ ও গ্রামের রাস্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কের ক্ষতি হয়েছে। অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন গৃহিণী বলেন, রাস্তার চলন্ত ট্রাকের বালু বাতাসে উড়ে এসে বাড়িঘর নোংরা করে দেয়। ফলে ঘর পরিষ্কার রাখতে হিমশিম খেতে হয়।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে একটি সেতুসহ বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, লালপুরের পদ্মা নদীর চর থেকে বালু লুটের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তা দৃষ্টিগোচর হওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ স্বপ্রণোদিত হয়ে বালু লুটের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। লালপুরের অন্য যেকোনো নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দের নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নিতাই কুমার সাহা বলেন, পিবিআই নাটোরের পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে গত ১৯ এপ্রিল পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিনসহ তিনি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিদের শনাক্ত, সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র প্রস্তুতের কাজ শুরু করেন। দুই মাস তদন্ত শেষে তিনি গত বৃহস্পতিবার লালপুর আমলি আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লালপুরে পদ্মা নদীর চরে ফসলি জমির পাশ থেকে দুই মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিদিন ৭০টি ডাম্প ট্রাকে করে মোট ৪ হাজার ২০০ ট্রাক বালু নেওয়া হয়েছে। এতে আগামী বর্ষায় স্থানীয় লোকজনের কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মতিউর রহমান পদ্মা নদী থেকে বালু তোলার সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করেন। তিনি বলেন, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিপক্ষেরা তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত