Ajker Patrika

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল ভারতের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের চাপে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩: ১৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে ভারত। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণার পর প্রতিবেশী দুই দেশের এই প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব আরও বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতসহ একাধিক রপ্তানিকারক সংগঠনের দাবির মুখে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জন্য দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় দেশটির সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)।

২০২০ সালের জুনে চালু করা এই সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারে রপ্তানি পণ্য ভারতের স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে পাঠানো হতো।

সিবিআইসির নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তিটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ভারতে প্রবেশ করা কার্গোগুলোকে পূর্ববর্তী নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় ভূখণ্ড ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হবে।

ভারতের পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠনসহ (এইপিসি) একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে দেওয়া এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন ২০-৩০টি বাংলাদেশি ট্রাক দিল্লির এয়ার কার্গো কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে, ফলে ভারতের রপ্তানি পণ্য পরিবহনে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত পণ্যের ফলে বিমান পরিবহনে জায়গার সংকট তৈরি হয় এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। তারা অভিযোগ করেছে, এসব কারণে বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতাও কমে যাচ্ছে।

এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য আসার ফলে অতিরিক্ত ভাড়া, দীর্ঘ সময় ও পণ্য প্রসেসিংয়ে জট তৈরি হচ্ছিল। ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাই আমরা এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল চেয়েছি।’

সংগঠনটির মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেন, ‘সিবিআইসির এই সিদ্ধান্ত বিমানবন্দরের জট কমাবে, রপ্তানির সময় কমাবে এবং আমাদের পরিবহন ব্যয় অনেক কমিয়ে আনবে।’

তবে বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। থিংকট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বাংলাদেশের জন্য ভারতের এই সিদ্ধান্ত রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রমে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আগের ব্যবস্থায় ভারতে ট্রানজিট নিলে সময় ও খরচ—উভয়ই কমত। এখন সেই সুযোগ না থাকায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য পণ্য পাঠাতে দেরি হবে, খরচ বৃদ্ধি এবং অনিশ্চয়তাও দেখা দেবে। একই সঙ্গে ভুটান ও নেপালের মতো দেশগুলোর মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হতে পারে; কারণ, এই সিদ্ধান্ত তাদের বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করবে।’

এদিকে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কারণ, ডব্লিউটিও সদস্যরাষ্ট্রগুলো স্থলবেষ্টিত দেশগুলোকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে বাধ্য।

অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুযায়ী, সব সদস্যরাষ্ট্রকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য ট্রানজিটের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের ট্রানজিট বাধাহীন হতে হবে, অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব বা শুল্ক আরোপ করা যাবে না। যেহেতু উভয় দেশই ডব্লিউটিওর সদস্য, তাই ভারতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’

তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীনকে পাশে নিয়ে বাংলাদেশ ‘চিকেনস নেক’ অঞ্চলের কাছে কৌশলগত ঘাঁটি নির্মাণের যে পরিকল্পনা করছে, তা-ই হয়তো ভারতের এমন সিদ্ধান্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

প্রসঙ্গত, স্থলপথে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য যায়। বাংলাদেশের পণ্য নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির সময় ভারতের ভূখণ্ড পাড়ি দিতে হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে নেপাল ও ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত পণ্যের যানবাহন (ট্রাক) পরিবর্তন করা হয়। ট্রান্সশিপমেন্টের এই সুবিধা ভারত এখন থেকে বাংলাদেশকে দেবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত