Ajker Patrika

১৫ মাসে বন্ধ ১১৩ কারখানা, নতুন এসেছে ১২৮টি

  • ৬৯টি বন্ধ হয়েছে আগস্ট থেকে মার্চে।
  • নতুন কর্মসংস্থানের পরও বেকার ২২ হাজার শ্রমিক।
  • পাশাপাশি আসছে নতুন বিনিয়োগ।
  • স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনজনিত অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে তাদের নতুন সদস্য হয়েছে ১২৮টি কারখানা। তবে এই পনেরো মাসে আবার ১১৩টি কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে। কর্মসংস্থানের হিসাবে যোগবিয়োগের পর এখনো বেকারের সংখ্যা ২২ হাজার। যদিও এটিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলছেন গার্মেন্টস খাতের অনেকে।

নতুন ১২৮ কারখানায় মোট ৭৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর ১১৩টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ শ্রমিক।

বিজিএমইএর তথ্যে দেখা গেছে, ১১৩টির মধ্যে ৬৯টি (৬১ শতাংশ) বন্ধ হয়েছে গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অনেক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীই আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, পুরোনো কিছু কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। এতে সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছু হবে বলে আশা করা যায়। আর কারখানা চালু ও বন্ধ হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব ধরনের শিল্প খাতেই এমন দেখা যায়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং নানান পারিপার্শ্বিক কারণে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারছে না। এতেও অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।’

একই সঙ্গে বিপরীত চিত্রও আছে জানিয়ে মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বড় ও মাঝারি অনেক কারখানা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে তারা। সঙ্গে নতুন কারখানাও আসছে। এতে মোটের ওপর তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির এই অঙ্ক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি বন্ধ হওয়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে সংকটে পড়া বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি প্রতিষ্ঠান এবং ভারগো এমএইচ, মডিশ অ্যাটায়ার, সিরোক অ্যাপারেলস, ওডিশ ক্র্যাফট ইত্যাদি। তবে বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি কারখানা বন্ধ দেখানো হলেও তার মধ্যে কয়েকটি ছিল আসলে অস্তিত্বহীন। বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি কারখানা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৩ হাজারের মতো।

গত ১৫ মাসে বিজিএমইএর সদস্যপদ নেওয়া নতুন কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো একেএইচ আউটওয়্যার, এজেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সিটেক ফ্যাশন, সুপ্রিম আউটফিট, স্প্যারো গ্রিনটেক ইত্যাদি। নতুন ১২৮ কারখানার মধ্যে মাত্র ১৮টিতে শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। এর অর্থ দাঁড়ায় এগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা। এগুলোর মধ্যে এজেড কম্পোজিট গত বছর গাজীপুরে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকসংখ্যা ১৫০ জন। তবে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে সেখানে ৭০০-৮০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান মনে করেন, কিছু কারখানা বন্ধ হওয়া এবং তার বিপরীতে নতুন কারখানা চালু হওয়া শিল্প খাতের একটা স্বাভাবিক ও চলমান প্রক্রিয়া। তাঁর মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় একধরনের চাপ বা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা না কাটা পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে উদ্যোক্তারা কিছুটা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত