Ajker Patrika

অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আস্থা তলানিতে

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আস্থা তলানিতে

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও পুঁজিবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে বিএসইসির নীতিনির্ধারণীর দায়িত্ব নিয়েছে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার। এরই মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের মাস পেরিয়েছে, কিন্তু আস্থার উন্নয়ন তো দূরের
কথা, উল্টো আস্থা আরও তলানিতে নেমেছে।

নতুন কমিশনের অযাচিত সিদ্ধান্ত, অযৌক্তিক বক্তব্য, অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সংস্কার উদ্যোগ, আগের কমিশনের জারি করা ভুল নীতির প্রয়োগ, লোকদেখানো বড় জরিমানা আরোপ, স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অদক্ষতা পুঁজিবাজারে একের পর এক সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। তৈরি হচ্ছে নতুন বিতর্ক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিতর্কহীন উদ্যোগের ঘাটতি পুঁজিবাজারের দৈনন্দিন লেনদেনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে। এতে পুঁজির দরপতন থামছেই না। বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা নামছেন রাস্তায়।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশনের সদস্যদের বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে কমিশনের অদক্ষতা ফুটে উঠছে। ফলে বর্তমান কমিশনের ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএসইসিতে যা হচ্ছে, তা নজিরবিহীন। কমিশনের সদস্যদের যোগ্যই মনে করছেন না সব অংশী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীরা।’

এদিকে দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা ব্যর্থতার দায়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। একই দাবিতে বিকেলে ইউনূস সেন্টারের সামনে বিনিয়োগকারীদের আরও একটি দল জমায়েত হয়ে স্লোগান দেয়।

দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ জানান, তিনি পুঁজিবাজারে নতুন ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী তৈরি করবেন।

এ বিষয়ে মিন্টু নামের এক বিনিয়োগকারী গতকাল মতিঝিলে বলেন, ‘পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের বাজার ছাড়তে হচ্ছে। তিনি কোথা থেকে ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী নিয়ে আসবেন?’ পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করার বাইরে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসব বক্তব্যকে ভালোভাবে গ্রহণ করছেন না অংশীজনেরা।

অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের পর মূল চালিকাশক্তি স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তবে এদেরকে এড়িয়ে পুঁজিবাজার এগিয়ে নিতে চায় রাশেদ মাকসুদের কমিশন। এরই মধ্যে বাজার মধ্যস্থতাকারীদেরকে সাক্ষাতে সময় না দেওয়া এবং ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে সবার বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বসেছেন সমালোচনা হওয়ার পর।

ডিএসইর এক ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ‘বাজার মধ্যস্থতাকারীদের বাদ দিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে চাওয়ার মতো মনোভাব বোকামি ছাড়া কিছু নয়।’

অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করে ১ সেপ্টেম্বর ৯১৮তম জরুরি কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের কয়েকটি বড় ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি করে রাশেদ মাকসুদের কমিশন। তবে কমিটির দুজন সদস্যকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া বিষয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে এই দুজনের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

ডিএসইর আইনে নিষিদ্ধ ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে সাতজনকে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের ক্ষেত্রেই আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে বিতর্ক তৈরি হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং পুঁজিবাজার অনুবিভাগের প্রধান ড. নাহিদ হোসেন ছাড়া বাকি দুজন সরে দাঁড়ান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁদের ক্ষেত্রেও আইনের ব্যত্যয় হওয়ার প্রশ্ন দেখা দেয়। এতে তাঁরাও যোগ দেননি। তাঁদের মধ্য থেকে একজনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি প্রতিবেদনে ঋণখেলাপির তথ্য উঠে এসেছে। যদিও তিনি সরাসরি ঋণখেলাপি নন। তবে নিয়োগের  যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অদক্ষতার প্রমাণ মিলছে।

বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে গত মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এর প্রভাবে গতকাল বুধবার প্রধান পুঁজিবাজারে ডিএসইতে সূচক কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।

বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটা লোকদেখানো জরিমানা। কারসাজি করে যতটা মুনাফা করে, তার চেয়ে কম জরিমানা করা হয়েছে। তা ছাড়া অর্থ আদায় নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এই খবরে পুঁজিবাজারে ঠিকই পতন হয়েছে।

এ ছাড়া মঙ্গলবার কমিশন সভায় ৯টি কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়, যার নাম আগেই প্রকাশ করেছে বিএসইসি। যদিও তা হওয়ার কথা নয়। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অস্থিরতা দেখা গেছে বিএসইসির অভ্যন্তরেও। সংস্থাটির ভেতরে চলছে নজিরবিহীন অন্তর্দ্বন্দ্ব। ইতিমধ্যে সংস্থাটিতে কয়েকটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফোন করা হলেও বরাবরের মতো রিসিভ করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

৩৫ বছর ভারতে, স্বামী–সন্তান রেখে দেশে ফেরার নোটিশ পেলেন পাকিস্তানি সারদা

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত