Ajker Patrika

বিআইবিএমের গবেষণা

পাচারের অর্থের ৭৫ শতাংশ যায় বাণিজ্যের আড়ালে

  • বেশি পাচার বস্ত্র, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি আমদানিতে।
  • বাণিজ্যিক লেনদেনকেই অর্থ পাচারের নিরাপদ রুট মনে করা হয়।
  • নজরদারির সুযোগ থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৪৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হচ্ছে, যেখানে আমদানি-রপ্তানির সময় মিথ্যা ঘোষণার আশ্রয়ে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগ্রহ করা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষণায় বলা হয়, দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ বাণিজ্যের আড়ালে অদৃশ্যভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই অর্থ পাচার নজরদারির আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব; শুধু প্রয়োজন দক্ষতা, আন্তরিকতা ও কার্যকর কৌশল। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, অর্থ পাচার অব্যাহত থাকলে অর্থনীতি দুর্বল হবে, বিনিয়োগ কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়বে।

গবেষণার প্রধান উপস্থাপক ও বিআইবিএমের শিক্ষক আহসান হাবিব বলেন, অপরাধীরা অর্থ পাচারের সবচেয়ে নিরাপদ পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছে বাণিজ্যিক লেনদেন। এ পথে বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর সম্ভব, আবার দেখতেও বৈধ মনে হয়।

গবেষণায় ২০১৫ সালে সংশোধিত অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের পর ৯৫টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবগুলোই বাণিজ্যের আড়ালে সংঘটিত, যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। আর ২০২৪ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার; যা জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।

সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে বস্ত্র, ভোগ্যপণ্য এবং জ্বালানি আমদানির খাতে। গবেষণার জন্য দেশের ৩৭টি ব্যাংকের কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার ও প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব ব্যাংকের ১০০ শতাংশই জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব লেনদেনভিত্তিক তথ্যভান্ডার রয়েছে, ৯৫ শতাংশের রয়েছে নিষেধাজ্ঞা যাচাইপ্রক্রিয়া। তবে মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যাংক আমদানি-রপ্তানির মূল্য যাচাইয়ের ডেটাবেইস ব্যবহার করতে পারে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো থাকলেও তা এখনো দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন। ফলে নজরদারির সুযোগ থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না।

আলোচনার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, ‘বাণিজ্য অনেক সময় এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে বাইরের চোখে সব স্বাভাবিক দেখায়, কিন্তু ভেতরে থাকে অসংখ্য গোপন লেনদেন। কম দাম দেখিয়ে বা অতিমূল্যায়ন করে রপ্তানি-আমদানি হয়, সেখান দিয়েই অর্থ পাচার হয়। এসব বোঝার জন্য শুধু নিয়ম জানলেই হয় না; বুদ্ধি, কৌশল আর সতর্কতা দরকার।’

আলোচনায় অংশ নেন বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার অধ্যাপক ফারুক এম আহমেদ, মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, শিক্ষক আলী হোসেইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক এ কে এম রেজাউল করিম এবং বিএফআইইউর পরিচালক মোস্তাকুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাচার করা ৭৮১ কোটি টাকা ফেরত দিতে চেয়েও জামিন পেলেন না নাসার চেয়ারম্যান নজরুল

জীবন বিলিয়ে দিয়ে উত্তরার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন, কে এই মাহরীন চৌধুরী

পাইলটের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে

মেয়ের কফিনে বাবার চুমু

মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরাই ছিল ৩৭ বছরের মাসুকার ‘সংসার’, যুদ্ধবিমান তছনছ করে দিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত