বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশি সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠি অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, কার্যকর হওয়ার আগে দেনদরবার ও দর-কষাকষি করে শুল্কহার কমাতে না পারলে দেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলো বড় সংকটে পড়বে।
সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। মার্কিন প্রশাসনও আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছে। আজ বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। বৈঠকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
তবে ড. ইউনূসকে দেওয়া চিঠির পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত পণ্যের ফর্দ এই বৈঠকের ইতিবাচক ফল নিয়ে সংশয় জাগাচ্ছে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এতে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যেই বাংলাদেশের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। এতে সায় দেওয়া বেশ কঠিন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে কৃষিপ্রক্রিয়াজাত পণ্য, বোয়িং উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়াতে বলেছে। এ ছাড়া সব ধরনের শুল্ক, অশুল্ক বাধা কমিয়ে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটানোর শর্তও দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত ২ এপ্রিল ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নামে একটি পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো চালু করে। এরপর তিন মাস ওই শুল্ক স্থগিত রাখায় সময় পায় বাংলাদেশ। ওই সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে গত সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ট্রাম্পের চিঠি পৌঁছায়। চিঠিতে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। আগে এই শুল্কহার ধার্য ছিল ৩৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে চিঠি এলেও এটিকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এটি ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ, সরকার এখনো আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্ক কমানোর বা সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুযোগ খুঁজছে।
বাণিজ্যসচিব ট্রাম্পের চিঠিকে দেখছেন ‘অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ’ হিসেবে। তিনি ওয়াশিংটন রওনা হওয়ার আগে এক প্রশ্নের জবাবে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের চিঠি আশা করিনি। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এমন চিঠি হতাশাজনক। তবে আমরা আলোচনায় যাচ্ছি। এখনো সবকিছু চূড়ান্ত নয়। আমরা উইন উইন সিচুয়েশনে ওয়ান টু ওয়ান আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাশিত ফল বের করে আনার চেষ্টা করব। আলোচনায় ইতিবাচক ফল আসার সব উপকরণই বাংলাদেশের পক্ষে।’
শুল্ক কার্যকর হলে কী ক্ষতি
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। নতুন হার কার্যকর হলে তা এক লাফে বেড়ে যাবে ৫১-৫৪ শতাংশে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতা ও মূল্য সুবিধাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নতুন শুল্কহারে পুরোপুরি মার্কিন ক্রেতার ওপর নির্ভরশীল পোশাক কারখানাগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। অতিরিক্ত শুল্কহারের কারণে রপ্তানি কমলে উৎপাদন কমবে, বন্ধ হতে পারে কারখানা, ছাঁটাই হতে পারেন হাজারো শ্রমিক—যাঁদের বড় অংশই নারী এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্যাকেজিং, পরিবহন, ব্যাংকিং, কাঁচামাল সরবরাহসহ সহায়ক শিল্পগুলো। দেশের ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার পুরো অর্থনীতিকে নড়বড়ে অবস্থায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলোচনার মাধ্যমে ছাড় আদায়ের চেষ্টা
আলোচনার মাধ্যমে ছাড় আদায়ের চেষ্টা হিসেবে আজ সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে আলোচনায় বসছে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। সংশ্লিষ্টরা জানান, আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। অন্যতম অ্যাজেন্ডা হবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি ৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৫ বিলিয়ন, তবু তাদের শুল্ক কমেছে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। সেখানে বাংলাদেশের ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখনো এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ)। এ অবস্থায় বাড়তি ছাড় পাওয়া উচিত। ইউএসটিআর এলডিসিদের জন্য পৃথক ট্যারিফ হার নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার আগে থেকেই রোডম্যাপ তৈরি করে রেখেছে। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি, গম, তুলা ও বোয়িং উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে; যা পারস্পরিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বিদ্যমান শুল্ক-অশুল্ক বাধা আমরা আমাদের স্বার্থেই কমিয়ে আনার সমন্বিত পদক্ষেপে রয়েছি; যা অচিরে দৃশ্যমান হবে। এর বাইরে আমরা দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপে রয়েছি। উৎপাদন খরচ কমিয়ে রপ্তানিতে লিডটাইম কমিয়ে আনা হবে। এ জন্য সামগ্রিক আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সিঙ্গেল উইন্ডোতে সারার কাজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর ফলে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও যেন উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারেন।’
তবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘চিঠিতে যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলো মানা সম্ভব কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আলোচনার পরই জানা যাবে। আমরা কতটা নিতে পারছি, তারা কতটা গ্রহণ করছে।’
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
১ আগস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের ঝুঁকি প্রবল। সরকার বলছে, আলোচনার ফল এখনো অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে সরকারের সামনে তিনটি করণীয় জরুরি। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি প্রভাবিত করতে কার্যকর লবিং বা বার্তা চালান; দ্বিতীয়ত, আলোচনায় দৃঢ়, তথ্যসমৃদ্ধ ও আন্তরিক অবস্থান এবং তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যপূর্ণ ও খাত বহুমুখীকরণ।
বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো এলডিসি সুবিধা আলাদাভাবে দেয়নি। মিয়ানমার ও লাওসের ওপরও ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি শুল্ক। তাই এলডিসি সুবিধার ওপর ভরসা না করে আলোচনায় বাস্তবিক কৌশল দরকার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কারোপের পুরো প্রক্রিয়াই একটি অনিশ্চয়তা ও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেনি, আবার যুক্তরাষ্ট্রও ন্যায্য আচরণ করেনি। তিনি বলেন, এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তবে সেই সুযোগ কতটা বাস্তব হবে তা বলা কঠিন। কারণ, বিষয়টি এখন অনেকটাই নির্ভর করছে বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের অবস্থানের ওপর। তারা যদি শুল্ক কমিয়ে নেয় আর বাংলাদেশ না পারে, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি, কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি ও সামগ্রিক জীবনমান সবখানেই চাপ বাড়বে। তবে যদি অন্যরাও কমাতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশের চাপ কিছুটা কম হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, সরকার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছে। এখন কথা নয়, দরকার দ্রুত, তথ্যনির্ভর ও কৌশলগত জবাব। আলোচনা হচ্ছে ভালো। তবে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে ফল শূন্য হবে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ও সুপারিশ
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩৫ শতাংশ নতুন শুল্ক যোগ হলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এতে প্রতিযোগিতা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় ধরনের বিপদে পড়বে এবং মার্কিন ক্রেতারা সহজেই ভিয়েতনাম বা মেক্সিকোর মতো কম শুল্কের দেশে চলে যেতে পারে। তিনি পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে বলেন, সমাধানে জরুরি কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপ হলে সেটা রপ্তানি খাতের জন্য বিপর্যয়কর হবে। আমরা সরকারের আলোচনাভিত্তিক কৌশলকে স্বাগত জানাই। তবে এখন শুধু কূটনীতি নয়, বাজার ও নীতিগত প্রস্তুতিও জরুরি।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে অনেক আগেই লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার উদ্যোগ নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে শুধু সরকারি প্রতিনিধি পাঠিয়ে দর-কষাকষিতে সফল হওয়া কঠিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশি সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠি অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, কার্যকর হওয়ার আগে দেনদরবার ও দর-কষাকষি করে শুল্কহার কমাতে না পারলে দেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলো বড় সংকটে পড়বে।
সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। মার্কিন প্রশাসনও আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছে। আজ বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। বৈঠকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
তবে ড. ইউনূসকে দেওয়া চিঠির পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত পণ্যের ফর্দ এই বৈঠকের ইতিবাচক ফল নিয়ে সংশয় জাগাচ্ছে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এতে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যেই বাংলাদেশের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। এতে সায় দেওয়া বেশ কঠিন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে কৃষিপ্রক্রিয়াজাত পণ্য, বোয়িং উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়াতে বলেছে। এ ছাড়া সব ধরনের শুল্ক, অশুল্ক বাধা কমিয়ে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটানোর শর্তও দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত ২ এপ্রিল ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নামে একটি পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো চালু করে। এরপর তিন মাস ওই শুল্ক স্থগিত রাখায় সময় পায় বাংলাদেশ। ওই সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে গত সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ট্রাম্পের চিঠি পৌঁছায়। চিঠিতে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। আগে এই শুল্কহার ধার্য ছিল ৩৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে চিঠি এলেও এটিকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এটি ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ, সরকার এখনো আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্ক কমানোর বা সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুযোগ খুঁজছে।
বাণিজ্যসচিব ট্রাম্পের চিঠিকে দেখছেন ‘অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ’ হিসেবে। তিনি ওয়াশিংটন রওনা হওয়ার আগে এক প্রশ্নের জবাবে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের চিঠি আশা করিনি। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এমন চিঠি হতাশাজনক। তবে আমরা আলোচনায় যাচ্ছি। এখনো সবকিছু চূড়ান্ত নয়। আমরা উইন উইন সিচুয়েশনে ওয়ান টু ওয়ান আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাশিত ফল বের করে আনার চেষ্টা করব। আলোচনায় ইতিবাচক ফল আসার সব উপকরণই বাংলাদেশের পক্ষে।’
শুল্ক কার্যকর হলে কী ক্ষতি
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। নতুন হার কার্যকর হলে তা এক লাফে বেড়ে যাবে ৫১-৫৪ শতাংশে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতা ও মূল্য সুবিধাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নতুন শুল্কহারে পুরোপুরি মার্কিন ক্রেতার ওপর নির্ভরশীল পোশাক কারখানাগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। অতিরিক্ত শুল্কহারের কারণে রপ্তানি কমলে উৎপাদন কমবে, বন্ধ হতে পারে কারখানা, ছাঁটাই হতে পারেন হাজারো শ্রমিক—যাঁদের বড় অংশই নারী এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্যাকেজিং, পরিবহন, ব্যাংকিং, কাঁচামাল সরবরাহসহ সহায়ক শিল্পগুলো। দেশের ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার পুরো অর্থনীতিকে নড়বড়ে অবস্থায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলোচনার মাধ্যমে ছাড় আদায়ের চেষ্টা
আলোচনার মাধ্যমে ছাড় আদায়ের চেষ্টা হিসেবে আজ সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে আলোচনায় বসছে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। সংশ্লিষ্টরা জানান, আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। অন্যতম অ্যাজেন্ডা হবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি ৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৫ বিলিয়ন, তবু তাদের শুল্ক কমেছে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। সেখানে বাংলাদেশের ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখনো এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ)। এ অবস্থায় বাড়তি ছাড় পাওয়া উচিত। ইউএসটিআর এলডিসিদের জন্য পৃথক ট্যারিফ হার নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার আগে থেকেই রোডম্যাপ তৈরি করে রেখেছে। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি, গম, তুলা ও বোয়িং উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে; যা পারস্পরিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বিদ্যমান শুল্ক-অশুল্ক বাধা আমরা আমাদের স্বার্থেই কমিয়ে আনার সমন্বিত পদক্ষেপে রয়েছি; যা অচিরে দৃশ্যমান হবে। এর বাইরে আমরা দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপে রয়েছি। উৎপাদন খরচ কমিয়ে রপ্তানিতে লিডটাইম কমিয়ে আনা হবে। এ জন্য সামগ্রিক আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সিঙ্গেল উইন্ডোতে সারার কাজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর ফলে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও যেন উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারেন।’
তবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘চিঠিতে যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলো মানা সম্ভব কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আলোচনার পরই জানা যাবে। আমরা কতটা নিতে পারছি, তারা কতটা গ্রহণ করছে।’
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
১ আগস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের ঝুঁকি প্রবল। সরকার বলছে, আলোচনার ফল এখনো অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে সরকারের সামনে তিনটি করণীয় জরুরি। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি প্রভাবিত করতে কার্যকর লবিং বা বার্তা চালান; দ্বিতীয়ত, আলোচনায় দৃঢ়, তথ্যসমৃদ্ধ ও আন্তরিক অবস্থান এবং তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যপূর্ণ ও খাত বহুমুখীকরণ।
বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো এলডিসি সুবিধা আলাদাভাবে দেয়নি। মিয়ানমার ও লাওসের ওপরও ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি শুল্ক। তাই এলডিসি সুবিধার ওপর ভরসা না করে আলোচনায় বাস্তবিক কৌশল দরকার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কারোপের পুরো প্রক্রিয়াই একটি অনিশ্চয়তা ও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেনি, আবার যুক্তরাষ্ট্রও ন্যায্য আচরণ করেনি। তিনি বলেন, এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তবে সেই সুযোগ কতটা বাস্তব হবে তা বলা কঠিন। কারণ, বিষয়টি এখন অনেকটাই নির্ভর করছে বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের অবস্থানের ওপর। তারা যদি শুল্ক কমিয়ে নেয় আর বাংলাদেশ না পারে, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি, কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি ও সামগ্রিক জীবনমান সবখানেই চাপ বাড়বে। তবে যদি অন্যরাও কমাতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশের চাপ কিছুটা কম হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, সরকার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছে। এখন কথা নয়, দরকার দ্রুত, তথ্যনির্ভর ও কৌশলগত জবাব। আলোচনা হচ্ছে ভালো। তবে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে ফল শূন্য হবে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ও সুপারিশ
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩৫ শতাংশ নতুন শুল্ক যোগ হলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এতে প্রতিযোগিতা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় ধরনের বিপদে পড়বে এবং মার্কিন ক্রেতারা সহজেই ভিয়েতনাম বা মেক্সিকোর মতো কম শুল্কের দেশে চলে যেতে পারে। তিনি পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে বলেন, সমাধানে জরুরি কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপ হলে সেটা রপ্তানি খাতের জন্য বিপর্যয়কর হবে। আমরা সরকারের আলোচনাভিত্তিক কৌশলকে স্বাগত জানাই। তবে এখন শুধু কূটনীতি নয়, বাজার ও নীতিগত প্রস্তুতিও জরুরি।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে অনেক আগেই লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার উদ্যোগ নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে শুধু সরকারি প্রতিনিধি পাঠিয়ে দর-কষাকষিতে সফল হওয়া কঠিন।
দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে বসল যুক্তরাষ্ট্র। এতে চিন্তায় পড়েছে দেশের ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, এই শুল্কহার যদি শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে, তাহলে ভয়ানক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে রপ্তানি খাত।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতির জবাবে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্তে হতাশ বাংলাদেশ; যদিও আলোচনার দরজা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। শুল্কহার বহাল থাকলে রপ্তানি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৪ ঘণ্টা আগেদেশে উৎপাদিত ফ্রিজ ও এসির খুচরা যন্ত্রাংশে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে হুমকিতে পড়েছে দেশীয় ইলেকট্রনিকস শিল্প। উদ্যোক্তারা বলছেন, এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়বে। তাঁদের দাবি, আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের অর্থ হলো...
৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নির্ধারিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ। মার্কিন উচ্চ শুল্ক এই খাতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। এর ফলে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পে
৭ ঘণ্টা আগে