Ajker Patrika

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়া যা বললেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতির জবাবে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্তে হতাশ বাংলাদেশ; যদিও আলোচনার দরজা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। শুল্কহার বহাল থাকলে রপ্তানি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এপ্রিলের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ছবি: এএফপি
এপ্রিলের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ছবি: এএফপি

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বড় বাধার সম্মুখীন হব

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ঘোষণা হওয়ার পর বাংলাদেশ কিছু ছাড় পেয়েছিল। তবে তিন মাসের আলাপ-আলোচনার পর প্রাথমিক ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশে আনা হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকলেও নতুন শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্ক প্রায় ৫০ শতাংশ ছুঁয়ে যাবে, যা রপ্তানির জন্য বড় সংকট ডেকে আনবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে গত তিন মাসে বাংলাদেশ প্রায় ১০ শতাংশ শুল্কের সমপর্যায়ে ছিল। চীনকে বাদ দিলে ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া এবং অন্যান্য দেশ এই হারের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বিশেষ করে ভিয়েতনাম তার শুল্কের জন্য সফলভাবে আলোচনা করেছে এবং তার পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য হয়েছে।

এর অর্থ হলো, ভিয়েতনামের তুলনায় আমাদের পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক আরোপিত হবে। মার্কিন বাজারে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় এই পার্থক্য রপ্তানিকারকদের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি চীন ও অন্যান্য দেশ ভিন্ন হার পেয়ে থাকায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়বে।

ব্র্যান্ড বায়াররা হয়তো কিছুটা এই অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা বহনের চেষ্টা করবে। ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের ওপর আরোপিত বাড়তি ১৫ শতাংশ শুল্কের কিছুটা খরচ রপ্তানিকারকেরা নিতে বাধ্য হবে, কিছু অংশ বায়াররা বহন করবে। তারা চেষ্টা করবে বাজারের প্রতিযোগিতার পরিবেশ আগের মতো রাখার। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে হচ্ছে।

ভবিষ্যতে তারা শিফট করার পথ খুঁজতে শুরু করবে। বর্তমানে অর্ডার অনেক হয়ে যাওয়ায় এবং বাংলাদেশ বড় একটি সাপ্লায়ার হওয়ায় হঠাৎ করে ক্রেতারা সরবরাহ শিফট করবে না, কিন্তু মধ্য মেয়াদে এই বাড়তি শুল্ক আমাদের জন্য এক বড় সতর্কসংকেত, বিশেষ করে রেডিমেড গার্মেন্টস খাতে।

এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক চাপের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মুথ ট্রানজিশনের কৌশল গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো জরুরি, যা শুল্কের প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়াবে।

এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, নতুন বাজার অনুসন্ধান ও প্রযোজ্য বাণিজ্য নীতি নিয়ে সঠিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এতে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।

ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়
ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়

অতিরিক্ত শুল্ক কৌশলে উত্তরণের সুযোগ এখনো আছে

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার বলছে, বিষয়টি নিয়ে আরও একটি বৈঠক হবে। কিন্তু চিঠি এসেছে। মানে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে কতটা নেগোসিয়েশনের সুযোগ আছে, সেটা তো ওই চিঠিতে পরিষ্কার নয়। যদিও বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আস, আমরা সেটাকে বিবেচনা করব।’

যুক্তরাষ্ট্র ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ বিষয়টি উল্লেখ করেছে, কিন্তু তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে যেটা ট্রান্সশিপমেন্ট, অর্থাৎ এক বন্দরে পণ্য নামিয়ে আবার নতুন জাহাজে তুলে গন্তব্যে পাঠানো; সেই সংজ্ঞা ইউএসপিআরের ভাষায় কিছুটা ভিন্ন। তাই কোন প্রক্রিয়াকে তারা এই শুল্ককাঠামোর আওতায় আনবে, সেটি স্পষ্টভাবে জানতে হবে।

শুধু ৩৫ শতাংশ শুল্ক বললে চলবে না। প্রযোজ্য এইচএস কোড অনুযায়ী পণ্যের তালিকা ও হার জানতে হবে। কারণ, যেসব পণ্যে আগেই ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেগুলোর ওপর ৩৫ শতাংশ যুক্ত হলে, তা হবে ৫০ শতাংশ। এটা রপ্তানিকারকদের জন্য বিরাট চাপ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন প্রস্তাব দিলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এটাই আমাদের সুযোগ। প্রয়োজন একটি গোছানো কাউন্টার প্রস্তাবনা। এখানে একটা স্পর্শকাতর বিষয় আসবে, চীন ওদের (আমেরিকার) টার্গেট। যদি ওদেরকে বলা হয়, আমি চীন থেকে আমদানি কম করব, তোমার থেকে আমদানি বেশি করব, তাহলে ইউএসএ দুয়ারটা খুলবে। কিন্তু চীনের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। ওখানে একটু সমস্যা আছে। দুই দিক বিবেচনা করতে হবে।

তৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে বড় চাপ আসবে বিক্রেতা-ক্রেতা সম্পর্কে। বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ক্রেতাদের ওপর এই শুল্কের বোঝা কিছুটা চাপাতে হবে। ৩৫ শতাংশের মধ্যে আমরা কতটা দেব, ক্রেতা তার মুনাফা কমিয়ে হোক বা বাজারে মূল্য বাড়িয়ে হোক, কতটুকু বহন করবে, এই সমস্যা এখন মোকাবিলা করতে হবে। রপ্তানিকারকেরা যদি প্রতিযোগিতার কারণে একে অপরকে টপকাতে গিয়ে পুরো শুল্ক নিজেরা বহন করেন, তাহলে সেটা আত্মঘাতী হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা শুল্কের ভার বহন করতে রাজি হবে যদি তারা আর কোনো ভালো বিকল্প না পায়। আমরা যদি এখন ট্যারিফের বোঝার বেশির ভাগ ক্রেতাদের ওপরে দিতে পারি, তাহলে আমাদের রপ্তানি ঠিক থাকবে। ওদের বাজারে যখন দাম বাড়বে, মূল্যস্ফীতি যদি বেড়ে যায়, তখন ওদের স্টক ও বন্ড মার্কেটের প্রতিক্রিয়ার চাপেই নীতি বদলাবে। তখন আমাদের বাণিজ্যিক ঘাটতি কত হলো, ওটা আর স্ক্রিনে থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এখন ইরানের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবে না ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান

ভারী বৃষ্টি কোথায় কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

দক্ষিণ এশিয়ার নয়া আঞ্চলিক জোটের সম্ভাব্য নাম ‘সাকা’, প্রথম সম্মেলন ইসলামাবাদে

ইয়েমেনে ক্লিনিক খুলে ফেঁসে গেছেন ভারতীয় নার্স, এখন ফাঁসির অপেক্ষা

সেভেন সিস্টার্সকে সংযোগকারী ভারত-মিয়ানমারের কালাদান প্রকল্প চালু হবে ২০২৭ সালে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত