Ajker Patrika

বিনা টিকিটের যাত্রী তুলে পকেট ভারী রানিং স্টাফদের

  • প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকিটে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী পরিবহন।
  • ট্রেনে দায়িত্ব পালনরত অনেকেরই নেমট্যাগ নেই।
  • ট্রেনের ভেতরে কী হয় না হয়, সেটা আমার দেখার বিষয় না: স্টেশনমাস্টার
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০৮: ০৬
চিলাহাটি আন্তনগর এক্সপ্রেসে টিকিট ছাড়া দুই বগির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক যাত্রী। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিলাহাটি আন্তনগর এক্সপ্রেসে টিকিট ছাড়া দুই বগির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক যাত্রী। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ট্রেনে টিকিট ছাড়া যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আর এ কাজে জড়িত ট্রাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), অ্যাটেন্ডেন্ট, রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সদস্য ও ক্যাটারিংয়ে যুক্ত অসাধু কিছু লোক। ট্রেনের ওই রানিং স্টাফদের কারণে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনা টিকিটের একজন যাত্রীর কাছে রুটভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিচ্ছে চক্রটি। এ স্টেশন চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকিটের এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা পকেটে ভরছেন অসাধু রানিং স্টাফরা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ধরেই এখানে যাত্রীর চাপ থাকে। এই উপজেলা ছাড়াও পাশের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের যাত্রীরা এই রুটে যাতায়াত করে। এখান থেকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী রুটে পাঁচটি আন্তনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে প্রায় দুই হাজার লোকজন যাতায়াত করে। ঈদে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়।

সরেজমিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, ১২ বগির ট্রেনে প্রতি বগিতে ৯২ জনের ধারণক্ষমতা। অথচ দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় নীলসাগর আন্তনগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি আন্তনগর এক্সপ্রেস নামক দুটি ট্রেন। ট্রেন দুটিতে দেখা যায়, দায়িত্বরত অ্যাটেন্ডেন্ট সদস্যরা যাত্রীদের নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থের বিনিময়ে ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। অসাধু রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা টিকিটবিহীন যাত্রীদের টাকার বিনিময়ে খাবারের বগি ও দুই বগির মাঝখানে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেন। ক্যাটারিং সার্ভিসের সদস্যরা টাকা নিয়ে অবৈধভাবে খাবারের বগিতে যাত্রী পরিবহন করছেন। এ ছাড়া শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বগির অ্যাটেন্ডেন্ট ও এসি অপারেটররা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এসি বগিতে এবং দুই বগির মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় যাত্রী তুলছেন। কর্মরত টিটিইদের ট্রেনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে টিকিট চেক করছেন না। ট্রেনে দায়িত্ব পালনরত অনেকেরই নেমট্যাগ নেই।

বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠেন মিজানুর রহমান। গন্তব্য ঢাকা। তিনি বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে ট্রেনযোগে যাত্রা। অনেক চেষ্টা করেও টিকিট না পাওয়ায় বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠেছি। ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই একজন রেলওয়ে পুলিশ সদস্য টিকিট দেখতে চান। টিকিট নেই জানালে ১০০০ টাকা দাবি করেন। প্রথমে দিতে না চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা ও জেলের ভয় দেখায়। পরে আত্মসম্মানের ভয়ে ১০০০ টাকা দিতে বাধ্য হই। যদিও ভাড়া ৬০০ টাকা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এ স্টেশনে চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকিটের এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা পকেটে ভরেন অসাধু রানিং স্টাফরা।

চিলাহাটি আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ট্রেনে যাত্রীদের টিকিট দেখেন সাধারণত টিটিই। বিনা টিকিটে যদি কেউ ট্রেনে ওঠে, তবে অবশ্যই রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ সাপেক্ষে টিটিই তাকে ট্রেনের ভেতরেই টিকিট করে দেবেন। কেউ যদি যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা নিয়ে ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়, তবে সেটি অপরাধ হবে। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন বলেন, ‘ট্রেনের ভেতরে কী হয় না হয়, সেটা আমার দেখার বিষয় না। কেউ যদি তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে, তাহলে কী করার আছে বলেন?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে সার্ভার, ঝুলে আছে ৭ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত