Ajker Patrika

তাপপ্রবাহের মধ্যে বালিয়াডাঙ্গীতে সড়কের ৪ হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ০৪
তাপপ্রবাহের মধ্যে বালিয়াডাঙ্গীতে সড়কের ৪ হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ

গত বছর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার পাঁচ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। ওই রাস্তাগুলোর মধ্যে আট কিলোমিটার রাস্তায় নতুন গাছ লাগালেও বাকি রাস্তাগুলোতে গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এরই মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে আবারও ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার চার হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন যখন দুঃসহ হয়ে উঠেছে, সড়কে ছায়ার অভাবে যখন যাত্রী-পথচারীরা নাকাল—তখন এভাবে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। 

জেলা বন বিভাগ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী আয়তনের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁও জেলা রয়েছে ২ ভাগের কম বনভূমি। এসব গাছপালা কেটে ফেলা হলে তা শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে। সবকিছু জানার পরেও গত মাসে আট ইউনিয়নে রাস্তার অবশিষ্ট গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দুই ইউনিয়নে শুরু হয়েছে গাছ কাটা। 

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা রাস্তার গাছ কাটছেন। এক সপ্তাহ ধরে গাছ কেটে যাচ্ছেন, দেখার কেউ নেই। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী, তাঁরা চার হাজার গাছ কাটবেন। এক সপ্তাহে এরই মধ্যে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। 

বন বিভাগের আহ্বান করা দরপত্র অনুযায়ী, উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া থেকে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানি হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ি থেকে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে বাহার জিলা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিণ্ডি থেকে খোঁচাবাড়ী হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা ও দলুয়া হয়ে পান্তাভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাটার জন্য এসব গাছের গায়ে এরই মধ্যে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এসব গাছে পাখির বাসাও দেখা গেছে। 

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায়। তিনি বলেন, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা মাঠে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেন। এ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে এখন রাস্তার দুই পাশের বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটা হলে মরুভূমিতে পরিণত হবে এলাকাটি। তাই এলাকাবাসীর দাবি প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে এই মুহূর্তে গাছগুলো না কেটে কিছুদিন পরে কাটলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো। 

পথচারী আব্দুস সালাম বলেন, ‘পরিবেশটা ঠান্ডা হলে গাছগুলো কাটুক তাতে আপত্তি নাই। এখন গাছগুলো কাটলে প্রচণ্ড রোদে মানুষসহ প্রাণিকুলের জন্য পরিবেশটা খারাপ হতে পারে।’ 

স্কুলছাত্র আবু শামিম (১২) বলে, ‘গরমের কারণে আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুল সাত কিলোমিটার দূরে। গাছগুলোর ছায়ায় আরামে স্কুলে যাতায়াত করতাম আমরা। গাছগুলো কাটতে শুরু করেছে, স্কুল খুললে ছাতা নিয়ে যেতে হবে। আগের মতো আরামে আর স্কুলে যাওয়া হবে না।’ 

জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও জেলায় দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি। গরমের তীব্রতায় মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ অবস্থায় গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। 

সনগাঁও গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আমানুল্লাহ জানান, রাস্তার পাশের গাছগুলো এই মুহূর্তে যেমন মানুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি পশুপাখিদের জন্যও প্রয়োজন। অনেক পাখি এখন গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সময়ে পাখিগুলোর জন্য হলেও কিছুদিন পরে গাছগুলো কাটা উচিত। 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা পাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘দরপত্র হয়েছে গাছ কাটবে ঠিকাদার। এতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি, গরমের দিনগুলো পার করে গাছ কাটা হোক। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাব আমরা।’ 

ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যাঁরা লাগিয়েছেন তাঁদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি। তাপপ্রবাহ কমে গেলে দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদার গাছ কাটবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উড়তে থাকা ভারতকে থামাতে ফিল্ডিং নিল নিউজিল্যান্ড

ভারত-নিউজিল্যান্ডের চিন্তা বাদ দিয়ে আপাতত ঘুমাতে চান তিনি

ফরিদপুরে ছাত্রদলের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণার পরদিনই ১১ জনের পদত্যাগ

ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুল আলমের বাসা থেকে আড়াই কোটি টাকা উদ্ধার

ইতিহাস নির্মাতারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে: ঢাবি উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত