Ajker Patrika

রংপুরে ১০ মিনিটের ঝড়ে তছনছ বাড়িঘর, ফসলের ক্ষতি

রংপুর প্রতিনিধি
কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর। আজ রোববার সকালে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর। আজ রোববার সকালে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চারদিকে ভেঙে ও উপড়ে পড়া গাছপালা। বিধ্বস্ত ঘরের পাশে বসে পান্তা খাচ্ছিলেন কালা মিয়া। মুখে বিষণ্নতার ছাপ। কেমন আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন কালা মিয়া। বলেন, ‘আল্লাহ সহায় ছিলেন। জীবনটা বাঁচি আছে। ঘর থাকি কীভাবে বের হইছি, জানি না। ১০ মিনিটের সাঁতাও (ঝড়) বাড়িঘর তছনছ করিল। কোনটর যাইম, এখন কী করিম।’

দিনমজুর কালা মিয়ার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা ইকরচালী ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে ঝড়ে গাছ উপড়ে তাঁর তিনটি ঘর দুমড়েমুচড়ে গেছে। যখন গাছ উপড়ে পড়ে, তখন কালা মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরের ভেতরে ছিলেন। ভেঙে যাওয়া ঘর কীভাবে ঠিক করবেন, কোথায় মাথা গুঁজবেন—এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তাঁর।

শুধু তারাগঞ্জের কালা মিয়ায় নন, গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর তছনছ হয়ে যায়। পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক মিনিটের ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে এই ক্ষতি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক পিলার ও তার ছিঁড়ে যাওয়ায় রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, ওকড়াবাড়ী, মাঝেরহাট, ফকিরপাড়া, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণজন, নদীরপাড়, বামনদীঘিসহ বেশ কিছু এলাকায় বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ চলছে।

গতকাল শনিবার রাতে ঝড়ে গাছ পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার তিনটি ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শনিবার রাতে ঝড়ে গাছ পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার তিনটি ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

জগদীশপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ঘর ভেঙে গেছে ঝড়ে। তিনি বলেন, ‘সাঁতাওত যখন গাছ ভাঙি ঘরোত পড়ছে, তখন কলিজা উড়ি গেইছে। এখন কেমন করি এ্যাগা ঠিক করমো চিন্তায় বাঁচুছি না। যে টাকা কামাই করি, তাক খামো না ঘর ঠিক করমো।’

পীরগাছা উপজেলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে গেছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে অনেক সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন গাছ সরিয়ে নিতে কাজ করেন।

পীরগাছার কান্দি এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, রাত ৯টায় বাতাস শুরু হয়। রাত ১১টার দিকে বাতাসের সঙ্গে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। গাছপালা ভেঙে পড়ে। রাত ৯টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, কালবৈশাখীতে কোথায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও মাঠে কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত