Ajker Patrika

পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা

ঢাকায় ৫ হাজার অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা

  • রাজধানীতে চলে প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
  • অবৈধ অটোরিকশা মূলত আসে অন্য জেলা থেকে।
  • বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব বিআরটিএর।
  • অটোরিকশার জমা ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৩৩
ঢাকায় ৫ হাজার অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা

রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে চলা প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে অন্তত ৫ হাজার অবৈধ। বৈধ রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিটসহ দরকারি কাগজপত্র ছাড়াই এগুলো চলছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক সাম্প্রতিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ডিটিসিএতে এক সভায় রাজধানীতে বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানো এবং অবৈধভাবে চলাচলকারী অটোরিকশা অপসারণে কঠোর ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ডিটিসিএ সূত্র বলছে, বৈধ অনুমোদন ছাড়া ৫ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও পরিবহন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গত ১৮ জুন ডিটিসিএতে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজি/পেট্রলচালিত ফোর-স্ট্রোক অটোরিকশার সংখ্যা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সভা হয়। সভায় প্রয়োজনের নিরিখে রাজধানীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে অভিমত আসে। পাশাপাশি বলা হয়, অন্য জেলার নিবন্ধিত অটোরিকশাসহ অবৈধভাবে চলা অটোরিকশা অপসারণে ডিএমপিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভা সূত্র জানিয়েছে, এতে সিদ্ধান্ত হয়, ‘প্রাইভেট’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত অটোরিকশা শুধু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, প্রাইভেট হিসেবে চিহ্নিত রুপালি রঙের অনেক অটোরিকশা আসলে বাণিজ্যিকভাবে চালানো হয়। সভায় একক মালিকানার ভিত্তিতে চালকদের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার অটোরিকশা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব যানের মালিকানা ১০ বছরের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না—এমন শর্ত আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে সভায়।

ডিটিসিএর সভায় আরও মত এসেছে, ঢাকা মেট্রোরেল ও নগর পরিবহনের ফিডার সার্ভিস হিসেবে নির্দিষ্ট রুটে অটোরিকশা চালানোর ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর বেশির ভাগ অন্য জেলার; বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকায় এনে চালানো হচ্ছে। এসবের অনেকগুলোর রেজিস্ট্রেশন মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। ফলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এগুলো রাজধানী শহরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সভায় বিআরটিএর উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সিএনজির সিলিং (অনুমোদিত সংখ্যার সীমা) পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বিআরটিএ তাদের মতামত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।’

পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে রেজিস্ট্রেশনহীন অটোরিকশার চলাচল শুধু বেআইনিই নয়, এটা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিআরটিএ দায়িত্বশীল না হলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদারকি জোরদার না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

জমা ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য অব্যাহত

কার্যবিবরণী ঘেঁটে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকেরা চালকদের কাছ থেকে নির্ধারিত জমার বেশি অর্থ গ্রহণ করেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, সভায় তা নিয়েও আলোচনা হয়। রাজপথে ঘুরে অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিটারে না গিয়ে যাত্রীদের কাছে ইচ্ছোমতো ভাড়া হাঁকার সঙ্গে জমার সম্পর্ক আছে। চালকদের কথা হচ্ছে, মালিকেরা যে বাড়তি জমার টাকা নেন, তা তাঁরা যাত্রীর কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খুব কম অটোরিকশাচালকই মিটার ব্যবহার করেন। দর-কষাকষি করে ভাড়া ঠিক করেন তাঁরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বেশির ভাগ যাত্রীই মিটারের কথা আদৌ না তুলে চালককে প্রথমে গন্তব্য বলে ভাড়া জানতে চান। মিটারে না চলতে চাওয়া এবং অযৌক্তিক ভাড়া চাওয়া নিয়ে চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডা নিত্যদিনের চিত্র।

অটোরিকশার মালিকেরা এখন চালকদের কাছ থেকে দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা নেন। সরকার-নির্ধারিত হার অনুযায়ী প্রতি ৮ ঘণ্টার শিফটে সর্বোচ্চ জমা ৯০০ টাকা হতে পারে।

নাসির উদ্দিন নামের একজন অটোরিকশাচালক অভিযোগ করে বলেন, বেশি জমার টাকা জোগাড় করতেই তাঁরা ‘বাধ্য হন’ মিটার বন্ধ রেখে বেশি ভাড়া নিতে।

সভায় অংশ নেওয়া ডিটিসিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা না মেনে মালিকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন। আর চালকেরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিটারে না গিয়ে যাত্রীদের কাছে অযৌক্তিক ভাড়া চান।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া এবং জমা নির্ধারণের ওপর সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ না আনলে নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। যাত্রী, চালক ও মালিক—সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটা স্বচ্ছ ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা তৈরি করা দরকার। একই সঙ্গে অটোরিকশার যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তা ভাঙতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত