Ajker Patrika

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক

৩২ কিমিজুড়ে শুধুই গর্ত, ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে যান

  • টানা বর্ষণে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
  • এটুকু পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা।
  • প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
  • এই রাস্তা গাড়ি চালানোর অবস্থায়ই নেই: ভুক্তভোগী
  • ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
ফরিদপুর প্রতিনিধি
খানাখন্দ আর গর্তে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর সদরের বাখুণ্ডা এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
খানাখন্দ আর গর্তে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর সদরের বাখুণ্ডা এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশ। খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তে এই অংশের ৩২ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী। তবু ঝুঁকি নিয়ে ছুটে চলছে যানবাহন। ভোগান্তির এই যাত্রায় অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির কোথাও কোথাও টানা তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে বড় বড় গর্ত। একাধিক দুর্ঘটনাসহ যানবাহন বিকল হয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্যও চোখে পড়ে। মহাসড়কটির সবচেয়ে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জেলা সদরের বাখুণ্ডা ও মুন্সিবাজার, নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড, তালমা মোড় ও শংকরপাশা এবং ভাঙ্গা উপজেলার পুখুরিয়া এলাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় যানবাহনেরও চাপ বেড়েছে সড়কটিতে। প্রতিদিন এই অঞ্চলের অন্তত ২০টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। সড়ক এমন নাজেহাল যে ৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ফরিদপুরে এসেছিলেন অ্যাম্বুলেন্সচালক হৃদয় আহমেদ। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। রাস্তার এমন অবস্থায় রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বড় বড় গর্ত বৃষ্টির কারণে চোখে পড়ে না। রাতের বেলা ভয় লাগে।’

মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড এলাকায় দেখা যায়, কেমিক্যালবাহী একটি লরি অচল হয়ে পড়ে আছে। লরিটির সামনের দুটি চাকা পুরোপুরি বিকল। গাড়িটি বগুড়া থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় চালক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘এ রাস্তার জঘন্য অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো কায়দা নেই। রাস্তায় গর্ত ভরা। এই গর্তে পড়ে ঝাঁকুনি খেয়ে চাকার টার্নিং পয়েন্ট এক্সেল আউট হয়ে গেছে। এতে ২৫-৩০ হাজার টাকা লেগে যাবে।’

মোটরসাইকেলচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই রাস্তা গাড়ি চালানোর কোনো অবস্থায়ই নেই। কিছুদিন আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। কী কাজ করা হয়েছে?’

৫ বছরেও হয়নি জমি অধিগ্রহণ

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা গোলচত্বর পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার পথ রয়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পরে এই কাজ শুরু হবে বলে জানান ফরিদপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বর্তমানে ইট-বালু দিয়ে গর্ত ঢেকে দেওয়ার কাজ চলমান।’

সূত্র আরও জানায়, সড়কটি ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও নানা জটিলতায় এই অংশের জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এই অংশে ৮০ দশমিক ২৯৩৩ একর জমি অধিগ্রহণের কথা রয়েছে; যা ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট থেকে শুরু হয়ে ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদি পর্যন্ত মোট ৩৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটার অধিক্ষেত্র রয়েছে।

২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অধিগ্রহণের সময় রয়েছে।

চার লেনে উন্নীত করার দাবি

মহাসড়কের ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশ অতিদ্রুত চার লেনে উন্নীত করার দাবিতে ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। ১৩ জুলাই ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন’ কমিটির উদ্যোগে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

ভূমি অধিগ্রহণে তোড়জোড়

মানববন্ধনের পর চার লেনের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। গত মঙ্গলবার জরুরিভাবে আন্দোলন কমিটি, বাস মালিক সমিতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জেলা প্রশাসন। এ সময় জানানো হয়, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে এবং ন্যূনতম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করা হবে। এরই মধ্যে ৭টি এলএ কেসের মধ্যে ১টি পেমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে এবং বাকিগুলো ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত