Ajker Patrika

নড়াই ও জিরানি খাল যেন মশার কারখানা

  • খালে নেই পানির প্রবাহ, স্থির পানিতে সহজ হচ্ছে মশার বংশবিস্তার।
  • মশার উৎপাতে বিপাকে বনশ্রী, আফতাবনগর, নন্দীপাড়ার বাসিন্দারা।
  • ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।
আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৩৪
রাজধানীর নড়াই খালের পাড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। সেগুলো পানিতে মিশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। এতে বংশবিস্তার হচ্ছে মশার। ছবিটি গতকাল বনশ্রী এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা
রাজধানীর নড়াই খালের পাড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। সেগুলো পানিতে মিশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। এতে বংশবিস্তার হচ্ছে মশার। ছবিটি গতকাল বনশ্রী এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন নড়াই খাল যেন মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। খালটির স্থির পানিতে সারা বছরই চোখে পড়ে মশার লার্ভা। নিকটবর্তী জিরানি খালেরও একই দশা। এতে খাল দুটি হয়ে উঠছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ বিস্তারের উৎস। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ এ দুটি খালসংলগ্ন বনশ্রী, আফতাবনগর ও নন্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দারা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী হয়ে বালু নদ পর্যন্ত বিস্তৃত নড়াই খালটির স্থির ও দূষিত পানিতে প্রচুর মশার লার্ভা ভাসছে। মান্ডা থেকে নন্দীপাড়া হয়ে বালু নদ পর্যন্ত বয়ে যাওয়া জিরানি খালেও যত্রতত্র প্লাস্টিক, বোতল, আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় সেখানেও বংশ বিস্তার করছে মশা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনের বেলা কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যার পর ঘরে-বাইরে মশার উৎপাত বাড়ে। সন্ধ্যার পর দরজা-জানালা খোলা রাখা যায় না কোনোভাবেই। কীটনাশক স্প্রে, কয়েলের ধোঁয়া কোনো কিছুতেই কাজ হয় না। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগে হরহামেশা আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির প্রবাহ না থাকলে খাল কিংবা জলাশয়ে মশার বিস্তার ঘটবে। রোধ করতে হলে খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করে পানির স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে হবে।

সালাহ উদ্দিন মিশু থাকেন মেরাদিয়া হাটসংলগ্ন বনশ্রীর জে ব্লকে। সম্প্রতি তাঁর আট বছরের মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। মিশু বলেন, ‘এই এলাকায় আমি দুই বছর ধরে আছি। গত বছর আমার স্ত্রীর ডেঙ্গু হয়েছে, এ বছর মেয়ের হলো। এই ড্রেনগুলোতে মাঝেমধ্যে মশার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তবে খালে যে মশা বিস্তার করছে, সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। অন্তত খালের পানি তো পরিষ্কার রাখা যায়। সন্ধ্যার পর আপনি এই খালের পাশে এসে দাঁড়াতেও পারবেন না মশার জন্য।’

বনশ্রীতে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করেন মো. মুকিবুল। কথা হলে বলেন, ‘আমি রাতে ডিউটি করি, সারা শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করি, তারপরও মশা কামড়ায়। গত মাসে চিকুনগুনিয়া হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়েছে চিকিৎসায়।’

নলদিয়া ইসলাম নামের আফতাবনগরের এক বাসিন্দা জানান, তাঁর বাসার জানালায় নেট লাগানোর পরও মশা থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার দেড় বছরের একটা বাচ্চা আছে। চারদিকে যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, দিনরাত আতঙ্কে থাকতে হয়। এত মশা থাকা সত্ত্বেও এই এলাকায় সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।’

বনশ্রীর বি ব্লকের বাসিন্দা স্বপন খান জানান, দিনের বেলায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর মশার উৎপাতে ঘরে থাকা কঠিন হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়।

জিরানি খালের পাশের নন্দীপাড়া এলাকার দোকানি শাহ আলম বলেন, ‘খালটির জন্য এই এলাকায় সারা বছর মশার উৎপাত থাকে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখি, তারপরও নিস্তার নাই। মে মাসে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ছয় দিন দোকান বন্ধ রেখেছিলাম।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, খাল কিংবা যেকোনো ধরনের জলাশয়ে যদি পানির প্রবাহ না থাকে। তবে সেখানে মশা বংশ বিস্তার করবে। ঢাকার অনেক খাল রয়েছে, যেগুলো আবর্জনা অথবা দখলের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্ধার করে এসব খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করা উচিত, তাহলে সেখানে মশা কিংবা অন্যান্য জীবাণু সৃষ্টি হবে না।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিশাত পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খাল পরিষ্কার করলে আমরা লার্ভিসাইড দিই। সেখানে এত লার্ভা থাকার কথা না। তারপরও দায়িত্বরত অফিসারকে বলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্যের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত