Ajker Patrika

মারা গেলে বিজয় মিছিলের পর দাফন করার কথা বলেছিলেন আবু সাঈদ

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৬: ৩৯
Thumbnail image

‘যদি আজ শহিদ হই, তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্র সমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে রুমে ফিরবে, তখন আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন। একজন পরাজিতের লাশ কখনো তার বাবা-মা গ্রহণ করবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আদনান আবিরের নাম উল্লেখ করা এই কথাগুলো ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আগের দিন সোমবার নিজ ফেসবুকে পোস্টটি করেন বেরোবির কোটা আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

সোমবার বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আবু সাঈদ মারা গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদের আহত হওয়ার পুরো দৃশ্য ধারণ করেছে স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক গণমাধ্যম। টেলিভিশনসহ সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ভিডিও থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যায়।

সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের অগ্রভাগে ছিলেন আবু সাঈদ। এ সময় পুলিশ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় আবু সাঈদ বুক পেতে দেন। গায়ে গুলি লাগলে বসে পড়েন তিনি। পরে সড়কের ডিভাইডার পার হয়ে পড়ে যান। এ সময় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আবু সাঈদের ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত প্রত্যক্ষদর্শী বেরোবির শিক্ষার্থী নাহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, চোখের সামনে পুলিশ সাঈদকে গুলি করে মেরে ফেলল। কেউ কিছু করতে পারল না। সে আজ শহীদ। সাঈদের কথাই ঠিক হলো, সে আন্দোলনে রাজপথে প্রাণ দিল।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রায়হান হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন পিছু হটছিলাম। সাঈদ তখন পুলিশের মুখ বরাবর ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরেই ছিল। তাঁরা নির্বিচারে তাকে গুলি করেছে। সে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে গুলি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। তাকে মেরে ফেলেছে। ধিক্কার জানাই যারা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। রাবার বুলেটের আঘাতে মারা গেছেন কি না, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

আবু সাঈদের ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীতএ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রংপুর নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা ভিসি ড. অধ্যাপক হাসিবুর রহশীদসহ শিক্ষক নেতাদের রাতে উদ্ধার করে সার্কিট হাউসে আনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে।

মারা যাওয়ার আগের দিন আবু সাঈদ ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্ট শেয়ার করেন। এর মধ্যে শহীদ শামসুজ্জোহাকে স্মরণ করে তিনি লিখেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল, সবাই তো মরে গেছে, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত। এই প্রজন্মে যাঁরা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যত দিন বেঁচে আছেন, মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন শামসুজ্জোহা হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত