Ajker Patrika

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আবু সাঈদ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৩৯
Thumbnail image

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আজ সোমবার এ ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। পরিবারকে দেওয়া অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি পূরণ হলেও ওই ব্যক্তিটিই আর নেই। 

পরীক্ষায় আবু সাঈদের পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল—২০১২৫৬২৯৭। 

ফল প্রকাশের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বাংলা ও ইংরেজি দুই বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং এই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন।

১৮ আগস্ট আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বড় ভাই রমজান আলী মহানগর তাজহাট আমলি আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের দিনমজুর মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। বাবা-মাসহ ৯ ভাই-বোনের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল তাঁকে ঘিরে। কিন্তু এখন আছে শুধুই হাহাকার আর আর্তনাদ! আবু সাঈদের গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া।

ছয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবার ছোট। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তার বাবা। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সে নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এত দূর পর্যন্ত গিয়েছিল। পরিবারসহ এলাকাবাসীর অনেক স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে। 

ভাইয়ের গত ১৬ জুলাই ভাইয়ের মরদেহের পাশে ছোট বোন সুমি আর্তনাদ করে বলেন, ‘হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার হেরে স্বপ্ন পূরণ হলো হয়। কেটা হামাক এনা বোন কয়া ডাকপি রে।’ 

এলাকাবাসী জানান, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ ছিল। তিনি স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। 

বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে আশা করেছিলেন গ্রামের মানুষ।

এ দিকে এনটিআরসিএর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল-৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০ জন। এর মধ্যে স্কুল ও সমপর্যায়ের ৫৫ হাজার ৮৯০ জন, স্কুল-২ পর্যায়ের ৫ হাজার ৩২৩ জন এবং কলেজ ও সমপর্যায়ের ২২ হাজার ৬৫২ জনসহ সর্বমোট ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরীক্ষার্থী তাঁর নিবন্ধন পরীক্ষার রোল এবং ব্যাচ নম্বর ব্যবহার করে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার ফলাফল লিংক থেকে জানা যাবে। এ ছাড়া উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের টেলিটক থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। 

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা ১২ জুলাই এবং কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। 

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রার্থীদের মোট তিন ধাপে—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরপর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।  

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারি স্কুল–কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।  

২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত এনটিআরসিএ শুধু সনদ দিত। সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত