Ajker Patrika

‘কৃষিকাজ মনে হয় বাদে দেওয়া লাগে’ 

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ২৯
‘কৃষিকাজ মনে হয় বাদে দেওয়া লাগে’ 

‘সরকার যে হুট করি সারের দাম বাড়ে দিল, এখন হামার মতো কৃষকের কী হইবে? এভাবে হুট হাট করি সারের দাম বাড়াইলে কৃষক কীভাবে বাঁচপে? এমনিতে তো আবাদের সময় সার পাওয়া যায় না, তার উপুড় আবার বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা করি সারের দাম বাড়ে দিলে কেমন হইবে। এবারের আবাদের সময় সারের জন্য যে অবস্থা হইছিল! এখন তো দেখিচোল হামার মতো লোকের কৃষিকাজ মনে হয় বাদে দেওয়া লাগে।’ 

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গঙ্গাচড়া বাজারের জিরোপয়েন্ট জীগা তলায় চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সদর ইউনিয়নের কৃষক আইয়ুব আলী। 

এর আগে মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে এই দাম বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই গঙ্গাচড়া উপজেলার স্থানীয় বাজারে সারের দাম বেশি নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

জ্বালানি তেলের পর রাসায়নিক সারের দাম বাড়ায় গঙ্গাচড়ায় কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কৃষকেরা বলছে, উৎপাদিত ফসলের দাম ঠিকমতো পান না। এর মধ্যে আবার সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যায় তাহলে তাঁরা বিপদে পড়ে যাবেন। সরকার নির্ধারিত ৭৩০ টাকা দামের থেকেও এবারে টিএসপি সার আমাদের কিনতে হয়েছে বস্তা প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে। আবার যদি সারের দাম বাড়ায় তাহলে এবারে আমাদের সার কিনতে হবে প্রতিটি সারের বস্তা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। 

আব্দুল খালেক নামের এক স্থানীয় কৃষক ১১০ শতক জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। সারের দাম ও সার না পাওয়ায় সঠিকভাবে জমিতে সার দিতে পারেননি। দোকানে সার কিনতে গিয়ে দেখেন সারের দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা। তাই তিনি বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়ে পরিমাণে কম সার কিনেছেন। 

এ প্রসঙ্গে আব্দুল খালেক বলেন, ‘সারের দাম না হয় আজকে বাড়াইছে সরকার, আর সাথে সাথে দোকানেও দাম বাড়ি গেল? হামার মতো কৃষকের আজকেও যা কালকেও তা। হামার কৃষকের কোনো ভালো নাই।’ 

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরের দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের কাছে আগের দামে সার কেনা থাকলেও তারা বর্তমান সরকার নির্ধারণ করা দামে বিক্রি করছেন এসব সার। কৃষকেরা বেশি দাম দিয়ে কিনতে না চাইলে তারা দাবি করছেন, সার পাচ্ছেন না তারা। 

গঙ্গাচড়ায় চাষীঘর নামের সার বিপণন কেন্দ্রের এক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজি সারে পাঁচ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি করছি। এর কারণ আমরা বিএডিসি ডিলার। আমাদের সার বেশি বরাদ্দ নেই, আমরা যা সার পাইছি সে সার অনেক আগেই সরকারি দামে বিক্রি করে দিছি। এখন আমাদের তো ব্যবসা করা লাগবে। দোকানে সার না থাকলে অন্যান্য মাল বিক্রি হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে সার কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করছি।’ 

এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নতুন সার ডিলারদের কাছে আসেনি। অনেকের কাছে আগের দামে কেনা সার রয়েছে। যে সব সার আগের দামে কেনা আছে তাদের আগের দামে বিক্রি করতে হবে। নতুন দামে কৃষকের কাছে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি কোনো ডিলার এসব সার নতুন দামে বিক্রি করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান

১৭ বছর খাইনি, এবার খাব—টেন্ডার জমা দেওয়া ঠিকাদারকে বললেন বিএনপি নেতা

দেশে এল স্টারলিংক: কতগুলো ডিভাইস যুক্ত করা যাবে, কীভাবে করবেন

ছুটিতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন, নতুন দায়িত্বে আসছেন সিয়াম

মধ্যরাতে হাক্কানীর মালিকের বাসায় মবের হানা, আটক তিন সমন্বয়ককে ছাড়িয়ে নিলেন হান্নান মাসউদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত