Ajker Patrika

আবারও জলাবদ্ধতার শিকার ভবদহের ৪৫ গ্রাম, চীনের বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শন

­যশোর প্রতিনিধি
যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা পর্যবেক্ষণে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল এলাকা পরিদর্শন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা পর্যবেক্ষণে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল এলাকা পরিদর্শন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা বৃষ্টিপাতে আবারও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে যশোরের ভবদহ অঞ্চল। যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার অন্তত ৪৫টি গ্রামের বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে পানিতে। দীর্ঘদিনের নদী-নালা খনন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বছর বছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতাই মূল বাধা বলে অভিযোগ তুলেছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি।

এই অবস্থায় ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা পর্যবেক্ষণে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল এলাকা পরিদর্শন করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশেষজ্ঞ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এবার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভবদহ অঞ্চল ঘিরে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কিছু অংশ বিস্তৃত। এই অঞ্চলের পানিপ্রবাহ নির্ভর করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদীর ওপর। তবে এগুলো পলি পড়ে নাব্যতা হারানোয় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জুন মাসে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার, আর চলতি ২৯ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৫০ মিলিমিটার। এতে ভবদহ এলাকার অন্তত ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে।

অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘উঠানে হাঁটুপানি। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঘর থেকে বের হচ্ছি। জল বাড়লে এবার ঘরেও ঢুকে যাবে।’ একই গ্রামের সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘ভয়াবহ অবস্থার মুখে পড়েছি। এবার জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ হবে মনে হচ্ছে।’

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির তথ্যমতে, মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া, চলিশা, সুন্দলী, পায়রা, হোগলাডাঙ্গা ও নেহালপুর ইউনিয়নের অন্তত ৪৫টি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত এলাকার সংখ্যা বাড়ছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, বাড়িঘর, স্কুল-মাদ্রাসা ও উপাসনালয়।

সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি বলেন, ‘সরকার আমডাঙ্গা খাল, ৮১ কিলোমিটার নদী খনন এবং টিআরএম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেসব কাজ শুরু হচ্ছে না। ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের ৬টি গেট খোলা হলেও বাকি গেটগুলো বন্ধ থাকায় পানি দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।’

পরিস্থিতি মূল্যায়নে আগামী ৪ আগস্ট বেলা ৩টায় ডহর মশিয়াহাটী স্কুলে এক সভা আহ্বান করেছে সংগ্রাম কমিটি। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল ভবদহ পরিদর্শন করে। দলটিতে ছিলেন চিফ প্ল্যানার ঝু জমিং, সহকারী চিফ ইঞ্জিনিয়ার হুং হুজিওং, জেনারেল ম্যানেজার জাং ঝিজানসহ অন্যরা। সঙ্গে ছিলেন যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি, অভয়নগর ইউএনও পার্থ প্রতিম শীল এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার আন্তরিক। চীনা বিশেষজ্ঞ দলের মতামতের ভিত্তিতে এবার কার্যকর ও টেকসই সমাধানের দিকে এগোনো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত