Ajker Patrika

হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ডিবি হেফাজতে মারা যাওয়া হাবিব

বগুড়া প্রতিনিধি
Thumbnail image

বগুড়ায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়া আইনজীবীর সহকারী হাবিবুর রহমান হাবিব (৪২) তাঁর গ্রামের খুকি বেগম (৬০) হত্যা মামলায় জড়িত ছিলেন। খুকি তাঁর ছেলে বিপুল হত্যা মামলায় সাক্ষী হওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়। ১০ বছর আগে সংঘটিত বিপুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব। 

খুকি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মনোয়ারা বেগম ওরফে মুন্না গত বুধবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুকি হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। জবানবন্দিতে হাবিবসহ একই গ্রামের আনছার ও তাঁর স্ত্রী ছকিনা বেগমের নাম উল্লেখ করেন। পরে পুলিশ আনছার ও ছকিনাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তাঁরা তিন দিনের রিমান্ডে শাজাহানপুর থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। 

জানা গেছে, ৩ অক্টোবর শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া দামোদারপাড়া গ্রামের মনোয়ারা বেগমকে খুকি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাঁর বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেগমের লাশের একটি পা উদ্ধার হয়। 

পরে মনোয়ারার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বগুড়া জেলা জজ আদালতের সামনে থেকে আইনজীবীর সহকারী হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করে। ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই দিন রাত পৌনে ৯টায় হাবিব মারা যান। 

এ ঘটনায় হাবিবের পরিবারের পক্ষ থেকে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হলেও এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। তবে হাবিবের বাবা আব্দুল কুদ্দুস বাবলু বলেছেন, দুই দিন সরকারি ছুটি ছিল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ হয়নি। এ কারণে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে মামলা না করার জন্য তাঁদের কেউ চাপ দেয়নি বলে জানান তিনি। 

এদিকে জেলা পুলিশের গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আকতার। সাত কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্তকাজ শেষ হবে জানান তিনি। 

অন্যদিকে আদালতে মনোয়ারা বেগম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন তিনি এক নাতিকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন। তার দুই মেয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। তারাই তার খরচ চালায়। খুকি বেগমের ছেলে বিপুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল হাবিব। খুকি বেগম ছিল সেই মামলার সাক্ষী। ২০ আগস্ট আদালতে খুকি বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। একই গ্রামের আনছারের কাছে খুকি বেগম ১০ হাজার টাকা পেত। আনছার সেই টাকা খুকি বেগমকে দীর্ঘদিন ধরে না দিয়ে ঘুরাতো। সে বিষয় নিয়ে খুকি বেগমের সঙ্গে আনছারের ঝামেলা চলছিল। ২ আগস্ট সন্ধ্যার পর আনছারের স্ত্রী ছকিনা এবং হাবিব খুকি বেগমকে সঙ্গে নিয়ে মনোয়ারার বাড়িতে যায়। সেখানে হাবিব খুকি বেগমকে জিজ্ঞেস করে ২০ আগস্ট তারিখে আদালতে সাক্ষী দিতে যাবে কি না? খুকি বেগম জানায় সে বিপুল হত্যা মামলায় সাক্ষী দিবে। এমন সময় আনছার মনোয়ারার বাড়িতে আসে। এরপর হাবিব এবং আনছার খুকি বেগমকে ধরে মনোয়ারার ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় হাবিব লাঠি দিয়ে খুকির মাথায় আঘাত করলে খুকি মাটিতে পড়ে যায়। 

এরপর হাবিব তার কাছে থাকা গামছা দিয়ে খুকির গলায় পেচিয়ে ধরে, আনছার খুকির মুখে কাপড়গুজে দেয় এবং আনছারের স্ত্রী ছকিনা খুকিকে ধরে থাকে। খুকি মারা গেলে তারা মনোয়ারাকে ভয় দেখায় কাউকে না বলার জন্য। এরপর একটি বস্তায় খুকির লাশ ভড়ে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে আনছার ও ছকিনা লাশ ধরে থাকে এবং হাবিব লাশ কেটে টুকরো করে বস্তায় ভরে পুকুর পাড়ে জঙ্গলে ফেলে দেয়। লাশ বস্তায় উঠানোর সময় একটি পা পড়ে থাকলে সেটি মনোয়ারার বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। 

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, মনোয়ারা বেগমের স্বীকারোক্তির পর আনছার ও তাঁর স্ত্রী ছকিনাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কাল রোববার তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত