Ajker Patrika

বিল আটকে রাখায় ক্ষোভ

রাসিকে উন্নয়নকাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি ঠিকাদারদের

  • অভিযোগের তির রাসিক সচিবের বিরুদ্ধে।
  • উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে নাগরিক ভোগান্তি।
  • জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স দিতে বিলম্ব।
  • স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ ও সচিব পরিবর্তনের দাবি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাসিকে উন্নয়নকাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি ঠিকাদারদের

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) উন্নয়নকাজে চরম ধীরগতি ও সেবায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদারেরা। তাঁদের অভিযোগ, বিল পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত থমকে আছে। কোথাও কোথাও কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শহরে ট্রাফিক জ্যাম বেড়েছে। নাগরিক সেবায়ও ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এর প্রতিবাদে আগামী বুধবার থেকে সব উন্নয়নকাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। গতকাল রোববার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিক সমাজ ও রাসিক ঠিকাদারবৃন্দ’-এর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে রাসিক সচিব রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন ঠিকাদারেরা। তাঁদের অভিযোগ, তিনি গত এপ্রিলে যোগদানের পর থেকে কোনো কারণ ছাড়াই মাসের পর মাস বিলের ফাইল আটকে রাখছেন।

ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘সচিবের অবহেলা ও অসৌজন্যমূলক আচরণে ঠিকাদারেরা হয়রানির শিকার। আমরা তাঁর কাছে বিলের জন্য গেলে অসদাচরণের মুখোমুখি হই। বিল সময়মতো না পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। এর ফলে উন্নয়নকাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের প্রশাসনিক ও সেবাসংক্রান্ত নানা অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ ও ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে অযৌক্তিক বিলম্ব হচ্ছে। ভবন নির্মাণে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) পেতে সাধারণত তিন থেকে চার দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু বর্তমানে এটি পেতে সময় লাগছে প্রায় আড়াই মাস। নতুন হোল্ডিং খোলার আবেদন করলে সেবাগ্রহীতারা কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক ল্যাম্পপোস্টে মাসের পর মাস আলো নেই। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ঠিকাদারেরা বলেন, রাসিকের পরিবহন, বিদ্যুৎ ও প্রকৌশল বিভাগে সমস্যা তীব্র হয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সচিবের অবহেলায় বিদ্যুৎ বিল সময়মতো পরিশোধ না করায় রাসিককে প্রায় আড়াই লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি এবং পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের বিল আটকে রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে।

তরিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘এসব অব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ছে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের কার্যক্রম নিয়েও সমালোচনা করা হয়। ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা প্রশ্নবিদ্ধ কাজে জড়িয়েছেন। তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকজন কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত। আমাদের ধারণা, এর মাধ্যমে সরকার ও সিটি করপোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।’

বর্তমান সচিব আগে যেখানে কাজ করেছেন, সেখানেও নাগরিক ভোগান্তির অভিযোগ ছিল বলে দাবি করেন ঠিকাদারেরা। রাসিকের বর্তমান প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। অভিযোগ করা হয়, তিনি পুরো বিভাগের দায়িত্বে থাকায় রাসিকের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। এতে সেবার মান ও উন্নয়নকাজের গতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, রাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী প্রশাসকের পরিবর্তে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ জরুরি। এতে কাজে গতিশীলতা ফিরবে। নাগরিক সেবার মানও উন্নত হবে। ঠিকাদারেরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আগামী বুধবার (২৩ জুলাই) থেকে রাসিকের সব উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২৭ জুলাই নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বেলাল খান, তৌহিদুল ইসলাম সেলিম, আজিজুল হক ভুঁইয়া, গাজী সালাহউদ্দীন, ইয়াহিয়া খান মিলু, রেজাউল ইসলাম, মো. আমিন, মো. শওকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাসিক সচিব রুমানা আফরোজ ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত