Ajker Patrika

রাজশাহীতে উদ্ধার হচ্ছে ভরাট হওয়া পুকুর, খুশি স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১৯: ৪৭
পুকুর উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুকুর উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে ভরাট শুরু হওয়া পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরের ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর কিছুদিন ধরে অল্প অল্প করে ভরাট করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শ্রমিক নিয়ে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রমও শুরু করেন। এই পুকুর নগরের ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায়। এটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। বোয়ালিয়া মৌজায় অবস্থিত এই পুকুর ব্যক্তিমালিকানাধীন। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষণের তালিকায়ও পুকুরটি আছে। এর অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে কিছুদিন ধরে ভরাট শুরু করেছিলেন হিকু নামের ওই এলাকারই এক ঠিকাদার।

একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল। কিন্তু অল্প কিছু পুকুর ছাড়া সবই ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করে। তখন বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় গণনা করে নগরে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পায়।

২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এই পুকুরগুলো সংরক্ষণসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। রাজশাহী শহরে আর কোনো পুকুর যেন ভরাট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি ভরাট হওয়া পুকুরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও শহরে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়েছে। দীর্ঘ সময়েও একটি পুকুরও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। এই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এতে খুশি এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে পুকুরে পড়ে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে পুকুর ভরাট শুরু হয়েছিল। দুই প্রান্তে ২১ জন শ্রমিক পুকুর উদ্ধারের কাজ করছেন। তারা পুকুরে ফেলা মাটি কেটে পাড়ে আনছেন। পুকুরের সামনে একটি নোটিশও টাঙানো হয়েছে। এতে লেখা, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। ময়লা-আবর্জনাসহ অন্য যেকোনোভাবে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’

শ্রমিকদের সর্দার রেজাউল করিম বলেন, ‘সকালে এসিল্যান্ড স্যার এসেছিলেন। মাপজোখ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কত দূর পর্যন্ত মাটি কেটে ওপরে তুলতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’

পুকুরপাড়ে ছিলেন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। তারা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে তিন বিঘা। এর মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটুকু পুকুর, সেটুকু তারা উদ্ধার করবেন। সেই মাটি কেটে পাড়ের অংশে ফেলা হবে।

পুকুর উদ্ধার কার্যক্রম দেখতে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দা চাঁন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘বয়স আমার ৯২। ছোটকালে কত ঝাঁপাঝাঁপি করেছি এই পুকুরে! তখন টলটলা পানি ছিল। শেষ বয়সে পুকুরটা ভরাট শুরু হতে দেখে মন খারাপ হতো। এখন উদ্ধার হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।’

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘পুকুর উদ্ধার হচ্ছে, এটা খুব ভালো খবর। আমাদের যে চাওয়া, তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তারপরও রাজশাহী শহরের পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পুকুর ভরাট যেন না হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। যে পুকুর ভরাট হয়েছে, সেগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা আছে। তার পরও এত দিন কিছুই হয়নি। এত দিন পর এ কাজটা অবশ্যই ভালো হচ্ছে।’

বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের জানান যে পুকুরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা যদি পুকুর ভরাটের খোঁজ পাই, তাহলে আগামীতেও অবশ্যই এই কার্যক্রম চলবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত