Ajker Patrika

সমাজসেবার বদলে নিজের সেবা

  • পৌরসভার ডাস্টবিনও গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান সাময়িক বরখাস্ত কর্মকর্তা।
  • জাহিদ হাসানের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
  • তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগও দেওয়া হলেও তদন্ত হয়নি।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
জাহিদ হাসান রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
জাহিদ হাসান রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে রিকশাচালককে জুতাপেটা করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। ফলে বারবার পার পেয়ে গেছেন জাহিদ। সবাইকে দেখিয়েছেন নিজের দাপট।

জাহিদের স্ত্রী রুবিনা পারভীন একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। তিনি ২০২৩ সালে রাজশাহীর আদালতে বদলি হয়ে আসেন। এরপর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হয়ে আসেন জাহিদ। ২ ফেব্রুয়ারি জজ কোয়ার্টারের সামনে এক রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। গাড়ি থেকে লাঠি বের করেও মারধর করেন। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ৩ মার্চ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

জাহিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। জাহিদের ‘জজ ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ি’ এবং ফাতেমা ফাউন্ডেশনের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এতে কয়েকটি ডাস্টবিন নজরে পড়েছে। এগুলোর গায়ে লেখা রয়েছে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার নাম। নওহাটা পৌরসভা সম্প্রতি ডাস্টবিন বিতরণ করেছে। এ-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ।

এই ডাস্টবিন জাহিদের গ্রামের বাড়ির ফাতেমা ফাউন্ডেশনে গেল কীভাবে—জানতে চাইলে কমিটির সদস্যসচিব ও পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ওয়ালিউল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা পবার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ডাস্টবিনগুলো বিতরণ করি। কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান তাঁর কার্যালয়ের জন্য কয়েকটি ডাস্টবিন নেন। এ ছাড়া তিনি পবার একটি সংগঠনকে কয়েকটি ডাস্টবিন দেওয়ার জন্য চিঠি দেন। এই ডাস্টবিন তিনি লোক পাঠিয়ে নিয়েছেন। তারপর কী করেছেন বলতে পারব না। যদি তিনি গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান, তাহলে এটা দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘এটা তিনি পারেন না। যদিও বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে জাহিদ অফিসে যাওয়া-আসা করতেন ‘বিচারক’ লেখা প্রাইভেট কারে চড়ে। এ গাড়ি দেখে রাস্তায় পুলিশ তাঁকে স্যালুট করত। অফিসে এসে অফিস সহকারী সোহাগ আলীকে দিয়ে গাড়িটি পাহারা দেওয়াতেন। বিচারক না হয়েও এমন লেখা-সংবলিত গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি পবার আগের ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত সমাজসেবার বিভাগীয় পরিচালককে জানিয়েছিলেন। পরিচালক জাহিদকে সতর্ক করেছিলেন।

জাহিদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা ইউএনওর কাছে জাহিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। শিমুল জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করতেন। গত বছরের ৬ মার্চ উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় অশালীন আচরণ করেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ মে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ মে সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ তাঁর মোবাইল ফোনসেট কেড়ে নিয়ে মেসেঞ্জার চেক করেন এবং কর্মচারীদের সামনে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত ও মন্তব্য করেন।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে জাহিদের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জাহিদের কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে পবার ইউএনও আরাফাত আমান বলেন, ‘এসব বিষয় এখন আসছে। আগে কেউ বলেনি। রিকশাচালককে মারধরের ঘটনায় জেলা প্রশাসক আমাকে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। সুনির্দিষ্ট বিষয়টি তদন্তের জন্য আমি একটা কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত শেষে যথাসময়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসানত বলেন, ‘সাক্ষাতে আসেন, তখন কথা বলব। মোবাইলে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত