Ajker Patrika

জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে দুর্নীতি: জামানতের ৫ গুণ বেশি আদায়

  • কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে টাকা হাতিয়েছেন নির্দিষ্ট দালাল চক্রের মাধ্যমে।
  • জনস্বার্থ উপেক্ষা করে সুবিধাভোগীদের তালিকা।
  • কোনো তদারকি নেই, কাজ না করে বা আংশিক করেই টাকা আত্মসাৎ।
সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৩১
রহিদুদ জামান, আকরামুল ইসলাম ও আয়েশা আক্তার সুমি। ছবি: সংগৃহীত
রহিদুদ জামান, আকরামুল ইসলাম ও আয়েশা আক্তার সুমি। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের নলকূপ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের অনুগত স্থানীয় ঠিকাদারের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা, নৈশপ্রহরীর স্বামী, নলকূপ বিক্রেতাসহ এলাকাভিত্তিক বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এসব দুর্নীতি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, জামানত হিসেবে ৭ হাজার টাকা লাগার কথা থাকলেও জনস্বাস্থ্যের সরকারি নলকূপ পেতে সুবিধাভোগীদের দিতে হয়েছে জামানতের ৩-৫ গুণ টাকা। নির্দিষ্ট দালাল চক্রের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অফিসেরই কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। অফিস প্রধানকে মেনেজ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন মেকানিক আকরামুল ইসলাম, নৈশপ্রহরী আয়েশা আক্তার সুমিসহ আরও কয়েকজন।\

বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় তাঁরা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তাঁদের জন্য জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় যেন হয়ে উঠেছে টাকা কামানোর মেশিন। সম্প্রতি তালিকায় নাম থাকা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা দেশের মতো ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ৩১২টি নলকূপ স্থাপনের কাছ শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু ত্রিশালে নলকূপ বসানোর জামানতের নাম করে চিহ্নিত দালাল চক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ গুণ টাকা আদায় করা হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে অফিসের পিয়ন, মেকানিক, অনুগত কিছু লোকের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে অনিয়ম করছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, এই এক প্রকল্পেই অফিসের যোগসাজশে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

জানা গেছে, নলকূপগুলো স্থাপনের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দোয়েল হেলথ ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ও এ এস আই অ্যাসোসিয়েট। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি নলকূপ স্থাপনের পর শুষ্ক মৌসুমেও যেন পানির অভাব না হয়, সে জন্য সাবমার্সিবল মোটর স্থাপনের কথা ছিল। পাকা উঁচু জায়গা তৈরি করে তার ওপর পানির ট্যাংক বসানো এবং নিচে পাকা প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কথা ছিল।

কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কম ক্ষমতাসম্পন্ন মোটর স্থাপন করেছে। বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্রেকার দেওয়া হয়নি। কোথাও আবার সুইচসহ অত্যন্ত নিম্নমানের সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়েছে। নলকূপের পানির প্ল্যাটফর্ম, ট্যাংক বসানোর জন্য উঁচু চেম্বার নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট। কারও কারও আবার প্ল্যাটফর্ম নির্মাণই করা হয়নি।

মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী ইজারাবন্দ গ্রামের আব্দুস ছালাম বলেন, ‘গরিব মানুষ আমি। টেহা না থাকায় কল (নলকূপ) কিনবার পায় নাই। পরে হায়দার ও আকরামে (জনস্বাস্থ্যের মেকানিক) কইল একজনের নামে একটা কল আইছে। ২৭ হাজার টাকা দিলে ওই কলডা আমি সরকার থেইকা লইয়া দিবার পাইবাম। তারা ২৭ হাজার টেহা নিয়া শুধু কলডায় গাইরা থইয়া গেছে। ট্যাংকি ও পাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছর অইয়া গেল এহনো কিছুই দেয় নাই।’

তালিকায় নাম দেওয়া বইলর কাজির শিমলা গ্রামের মোকসেদের। কিন্তু মোবাইল নম্বর দেওয়া বইলর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুদ্রগ্রামের হেলালের। ওই নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানা যায়। হেলাল মোকসেদকে চেনেন জানিয়ে বলেন, ‘তারটা পাইয়া (নলকূপ) ফালাইছে। এইনো আমি এইবার এগারোডা টিউবওয়েল এনে দিছি।’ আপনি এতগুলো নলকূপ কীভাবে দিলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাইনডা ওই যে অফিসে আমার মামা একজন থাকে তো, ওই যে আলম (নৈশপ্রহরী আয়েশা আক্তার সুমির স্বামী) তাঁর মাধ্যমে।’

অভিযোগের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য অফিসের নৈশপ্রহরী আয়েশা আক্তার সুমি বলেন, ‘আমি কোনো টিউবওয়েল দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নই। দু-একটা টিউবওয়েল আমার হাজব্যান্ডে দিছে।’ মেকানিক আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি, চেয়ারম্যান থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী আমাদের ঠিকাদার কাজ করেন। যাচাই-বাছাই করে তালিকা করার দায়িত্ব তাঁদের। এখন কেউ যদি টাকা দিছে বলে আমার নাম ছড়ায় তাহলে আমার করণীয় কিছুই নাই।’

সহকারী প্রকৌশলী মো. রহিদুদ জামান বলেন, ‘তালিকা তো আমরা দেই নাই, কেউ যদি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে সেটা তো তাদের বিষয়। চেয়ারম্যান, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানরা তালিকা করেছেন। আমাদের কাজ হলো তালিকা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা। অফিসের কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে সেটা তো অফিসের দায় নয়।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আমরা কঠিন অ্যাকশনে যাব। এটার কোনো ক্ষমা নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত