Ajker Patrika

নেত্রকোনায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বক্তব্য: হেফাজত নেতাকে মারধর, বাড়িতে হামলার অভিযোগ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
ভাঙচুর করা হেফাজত নেতার ঘর। ছবি: সংগৃহীত
ভাঙচুর করা হেফাজত নেতার ঘর। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনায় হেফাজতে ইসলামের এক নেতাকে মারধর ও তাঁর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। একটি মাদ্রাসার সুপারকে মারধরের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ওই হামলা-মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। গত বুধবারের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের হাটকলা বাজারে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় একই উপজেলার ছোট গরদী এলাকায় ওই হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তি আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়া উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় আমলী মধুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। হামলার শিকার মাওলানা আনিসুর রহমান হেফাজতে ইসলামের নেত্রকোনা জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বড় গরদী বাগানবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুপার আবদুল খালেক খান ও আবুল কালাম আজাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। আবুল কালাম কমিটির সভাপতি হতে চাইলেও তা সম্ভব না হওয়ায় এই বিরোধ আরও তীব্র হয়।

মাদ্রাসার সুপার আবদুল খালেকের অভিযোগ, সভাপতি হওয়ার জন্য আবুল কালাম তাঁকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এমনকি পরে চাঁদা দাবিও করেন। রাজি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার আবুল কালাম তাঁর লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় এসে সুপারকে মারধর করেন এবং কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেন। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও স্থানীয় সেনাক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে হেফাজতের নেতা আনিসুর রহমান বক্তব্য দেন। পরে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারও দেন তিনি।

আনিসুর রহমানের পরিবারের অভিযোগ, এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় আবুল কালাম, তাঁর ছেলে ও অনুসারীরা আনিসুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালান ও তাঁকে মারধর করেন। আহত আনিসুর রহমানকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল হাটকলা বাজারে বিক্ষোভ–মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতারা। এ সময় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা সেক্রেটারি ও হেফাজতের জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা আনিসুর রহমানের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তা ছাড়া চাঁদা না দেওয়ায় মাদ্রাসার সুপারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এর বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেফাজত নেতা। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেফাজত নেতা। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল দুপুরে হাটখলা বাজারে আবুল কালামের অনুসারীরাও মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে আবুল কালাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি, চাঁদাও চাইনি, শুধু কথা–কাটাকাটি হয়েছে। আনিসুর রহমান নিজেই তাঁর ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেছেন। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আবুল কালামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, ‘তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুপারকে লাঞ্ছিত করাসহ মানববন্ধনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা-মারধরের অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত