Ajker Patrika

ফকিরহাটে অচল স্লুইসগেট ও ভরাট খাল: জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত কৃষকেরা

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট) 
কৃষিজমির সঙ্গে সংযুক্ত নদী, খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কালভার্ট ও স্লুইসগেট অচল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর চাষিদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কৃষিজমির সঙ্গে সংযুক্ত নদী, খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কালভার্ট ও স্লুইসগেট অচল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর চাষিদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাটে কৃষিজমির সঙ্গে সংযুক্ত নদী, খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কালভার্ট ও স্লুইসগেট অচল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি বছর চাষিদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

বুধবার (১৮ জুন) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে আটটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষিজমি কমবেশি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ঘেরের আলের ওপরের কিছু সবজিখেত এখনো টিকে আছে।

কৃষি বিভাগের মতে, মাঝারি ও নিচু জমিতে খরিপ-১ মৌসুমে সবজির চাষ নিরুৎসাহিত করা হলেও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক কৃষক বেগুন, শসা, ঢ্যাঁড়স, কাঁচামরিচ, চালকুমড়া, চিচিঙ্গাসহ ১০-১২ ধরনের সবজির চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টিতে এসব ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার সতীরডাঙ্গা এলাকায় বগুড়ার বিলে চাষি শেখ সুজা জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে বৃষ্টির পানি জমে প্রায় ৩ লাখ টাকার সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। শসা, মরিচ ও চালকুমড়াগাছ মরে যাচ্ছে। বেগুনগাছ তাজা দেখালেও ইতিমধ্যে এর গোড়ায় পচন ধরেছে। রোদ উঠলেই গাছগুলো ঢলে পড়বে। অসংখ্য বেগুন ইতিমধ্যে পচে গেছে। বিলের ৩০ থেকে ৩৫ জন চাষির একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

উপজেলার পাগলা শ্যানগর এলাকার চাষি আবুল কালামের খেতের ঢ্যাঁড়স, বেগুন, ডাঁটা, মরিচ, শসাসহ অনেক সবজির গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। বাহিরদিয়া, ফকিরহাট সদর, মূলঘর, পিলজঙ্গসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে। মূলত নালা, খাল ও নদী ভরাটের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার দুর্বলতার করণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি খালের নাব্য ফিরিয়ে আনতে পুনঃখনন ও ১০টি স্লুইসগেট মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি)।

তবে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও এখনো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ভৈরব নদ ও কালীগঙ্গা নদী আগে খনন করা হলেও ওয়াসার বৃহৎ পাইপ বসানোর কারণে নদীর নাব্য কমেছে। নদীটি এখন প্রায় নালায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলার খাল পুনঃখননের জন্য বিভিন্ন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় খননের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেমন:

মাসকাটা খাল: ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৮ মিটার প্রস্থ, ৩ মিটার গভীর

রতনার খাল: ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ১০ মিটার প্রস্থ, ৩ মিটার গভীর

পাইশ্বামারী খাল: ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৫ মিটার প্রস্থ

সিসার, কবিরের, নওয়াপাড়া মরাগাঙসহ আরও কয়েকটি খাল

ফকিরহাটে ১৩টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১০টি দীর্ঘদিন ধরে অচল। ভেঙে যাওয়া দরজা দিয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত করছে, বিশেষ করে আমন মৌসুমে। ধনপোতা, মানুষ মারার, চাকুলী, ষাটতলা, মাসকাটা, খড়িবুনিয়া, মরাপশুর, বৈলতলী, গোবরা ও মুচি মারার স্লুইসগেটগুলো সংস্কারযোগ্য বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছে, এসব স্লুইসগেট ও খাল পুনঃখননের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলের শত শত মাছের ঘের ডুবে গিয়ে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

কৃষিজমির সঙ্গে সংযুক্ত নদী, খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কালভার্ট ও স্লুইসগেট অচল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর চাষিদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কৃষিজমির সঙ্গে সংযুক্ত নদী, খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং কালভার্ট ও স্লুইসগেট অচল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর চাষিদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রেণু মাছের ব্যবসায়ী ও ঘেরমালিক শেখ মনি বলেন, ‘এই দুরবস্থার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে প্রতিবছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’

উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ দ্রুত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা সচল করার দাবি জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত খাল ও স্লুইসগেটসমূহ দ্রুত সংস্কার না করলে সামনের দিনগুলো হবে আরও দুর্বিষহ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা পর্যায়ে অফিস না থাকায় বিএডিসির মাধ্যমে ১০টি খাল ও ১০টি স্লুইসগেট মেরামতের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা কমবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় কৃষকদের ছোট নালা ও কালভার্টগুলো সচল রাখতে সচেতন থাকতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত