Ajker Patrika

৩৯০ টাকা দরে গরুর মাংস পেল ৫০০ পরিবার

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৩৩
Thumbnail image

যশোরের বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। এই দামে মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই জেলা শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা খন্দকার জাহাঙ্গীরের (৬৯)। প্রায় ছয় মাস গরুর মাংস কিনে খেতে পারেননি এই বৃদ্ধ। আজ শনিবার আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে ৩৯০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনতে পেরে খুশি হয়েছেন তিনি। 

খন্দকার জাহাঙ্গীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী মারা গেছে বছর পাঁচেক হলো। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি; তারা শ্বশুরবাড়িতে থাকে। একমাত্র ছেলের সংসারেই আমার এখন সময় কাটে। আগে গাড়ি মেরামতের কাজ করতাম। এখন কিছু করতে পারি না। ছেলে দিনমজুর; সে-ই আমারে দেখে শুনে রেখেছে।’ 

খন্দকার জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘গরুর গোশত অনেক দিন খাইনি। খাব কী করে; দাম তো অনেক। ছয় মাস আগে ৫০০ গ্রাম গোশত কিনেছিল ছেলেডা; তখনই দুই-তিন পিস খাইলাম। আজ আইডিয়াতে বাজার দামের চেয়ে অর্ধেক দাম দিয়ে এক কেজি কিনলাম। বাড়ির পাশে একজনের ফ্রিজ আছে; সেখানে রেখে ঈদের দিন ছেলে, বেটার বউ আর নাতিছেলেডারে নিয়ে খাব।’ 

জাহাঙ্গীরের মতো যশোর শহরের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ৫০০ পরিবার বাজারের তুলনায় অর্ধেক দামে এক কেজি করে গরুর মাংস কিনেছে। আজ শনিবার যশোর শহরের খড়কি এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে নিজস্ব আঙিনায় ‘মধ্যবিত্তের ঈদবাজার’ শিরোনামে এই গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। ঈদের আগে মধ্যবিত্তের ঈদবাজার’ নাম দিয়ে এভাবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। 

আয়োজকেরা জানান, সরকার যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আওতার মধ্যে নিয়ে আসে, এ জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। সব মিলিয়ে এই প্রজেক্টে দুই লক্ষাধিক টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সংগঠনটি। 

খড়কি কবরস্থান এলাকা থেকে আসা রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা খেটেখুটে বাজার করে খেতে চাই, বাজারে গিয়ে গরুর মাংস কেনার ক্ষমতা তাদের নেই। এখানে সাড়ে ৭০০ টাকার গরুর মাংস ৩৯০ টাকায় কিনলাম। এর চেয়ে আর কম আছে নাকি।’ 

আমেনা খাতুন নামের এক নারী জানান, ‘মেসে বাসাবাড়িতে কাজ করি। স্বামী দিনমজুর। মনে করেছিলাম এবার ঈদে মাংস খেতে পারব না। কিন্তু আইডিয়া আমাদের সেই টেনশন কাটিয়ে দিয়েছে। এক কেজি মাংস নিয়েছি; ঈদের দিন স্বামী-সন্তান নিয়ে রান্না করে খাব।’ 

যশোর শহরের খড়কি এলাকায় আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা থেকে ৩৯০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার আইডিয়া লস প্রজেক্টের সমন্বয়ক হারুণ অর রশিদ জানান, আইডিয়া শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। এই প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষার্থীরা ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই নিত্যপণ্যের ব্যবসা করেছেন। তাঁরা বেশি দামে জিনিস কিনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে কম দামে বিক্রি করেছেন। উচ্চমূল্যের বাজারে গরুর মাংসের কেজি যখন ৭৫০ টাকা ছাড়িয়েছে, তখন মাত্র ৩৯০ টাকায় মাংস কিনতে পেরেছে তাঁদের কাছে আসা নিম্নআয়ের ৫০০ পরিবার। 
 
সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এম এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. হামিদুল হক শাহীন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারে সমাজের উচ্চবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে সব পণ্য পাওয়া গেলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ রয়েছেন বিপদে। তাঁরা না পারছেন দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে, না পারছেন মানুষের কাছে হাত পাততে। চক্ষুলজ্জায় তাঁদের কান্নাও লুকিয়ে রাখতে হয়। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে এই আয়োজন।’ 

 ২০১৩ সালে যশোরের বিভিন্ন কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতি শুক্রবার অসহায় ভবঘুরেদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে আসছেন। ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ এবং প্রতি রমজান মাসজুড়ে তাঁরা রোজাদারদের মধ্যে শীতল পানি সরবরাহ, মসজিদে অজুখানা বানিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেন। করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিনা মূল্য স্যালাইন অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে সংগঠনটি। এ ছাড়া সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত