Ajker Patrika

গোপনে বাল্যবিবাহ, ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ২১: ০৭
স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের মহেশপুরে এক স্কুলছাত্রীর বাল্যবিবাহ হওয়ায় তাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মহেশপুরের ভারত সীমান্তবর্তী স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, তিন মাস আগে ওই ছাত্রীর বিয়ে দিয়েছেন তার মা। বিয়ের তিন মাস পর বাবার বাড়িতে এসে ২০ জুলাই মাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায় ওই ছাত্রী। কিন্তু স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিবাহিত মেয়েদের কোনো ক্লাস করতে দেওয়া যাবে না। ছাত্রী ও তার মায়ের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি তিনি। পরে ক্লাসরুমে সহপাঠীদের সঙ্গে বসলেও প্রধান শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে নাম ধরে ডেকে বলেন, ‘বললাম চলে যেতে, এখনো বসে আছ কেন?’ এরপর ছাত্রী ও তার মাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার অভিভাবক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান।

ওই ছাত্রীর মা জানান, তিন বছর আগে মেয়ের বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে সামান্য জমিজমা, গরু পালন আর আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। অভাব–অনটন আর সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তিন মাস আগে বড় মেয়ে ওই ছাত্রীকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ের পড়ালেখার আগ্রহ দেখে তাকে আবার স্কুলে পাঠিয়েছেন তিনি।

ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমি বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুনয়-বিনয় করেছি, স্যার আমার মেয়েটা লেখাপড়া করতে চায়। ওকে ক্লাস করতে দেন। কিন্তু স্যার শোনেননি আমার কথা। শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিলাম। সেখান থেকেও ফোন দিলে স্যার বলেন, “চাকরি চলে গেলেও আমি ক্লাস করতে দেব না।” একটা মেয়ের বিয়ে হয়েছে, এ জন্য কেন সে ক্লাস করতে পারবে না?’  

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী বলে, ‘স্কুলে গেলে স্যার বারবার বলে, তুমি বিবাহিত, তোমাকে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না। সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাসে বসেছিলাম। সেখান থেকেও বের করে দেন। খুব খারাপ লাগছে। আমি কি আর ক্লাস করতে পারব না?’

অভিযোগের ব্যাপারে স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত যে বিবাহিত কোনো নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না। যে কারণে মেয়েটিকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি। এভাবে বিবাহিতদের ক্লাস করতে দিলে দিনে দিনে নারী শিক্ষার্থী কমতেই থাকবে। তাই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাল্যবিবাহ রোধেও এমন সিদ্ধান্ত কাজ করবে।’

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সদ্য দায়িত্ব নেওয়া স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দীনেশ চন্দ্র পাল বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত। প্রধান শিক্ষককে বলে দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন এমনটি না হয় এবং ওই ছাত্রীর বিষয়টি সমাধান করতে।’

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার বলেন, ‘বিয়ে হয়েছে আর এ কারণে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেওয়া যাবে না—এমন কোনো বিধান বা নিয়ম সরকারের নেই। বিষয়টি দ্রুতই সমাধান ও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত